ঢাকারবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দেশে দারিদ্র্য কমলেও খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ১৩, ২০২৩ ১০:৩৮ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

করোনা মহামারি পরবর্তী সময় ও রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধের মধ্যেও দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। দারিদ্র্যের বর্তমান হার ১৮.৭ শতাংশ, ছয় বছর আগে যা ছিল ২৪.৩ শতাংশ। এতে ৫.৬ শতাংশ দারিদ্র্য কমেছে। তবে ছয় বছর পর দেশে প্রতি পরিবারে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আয়োজিত ‘খানার আয় ব্যয় জরিপ ২০২২’-এর প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ‘খানার আয় ব্যয় জরিপ ২০২২’-এর প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।

জরিপের মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দেশে বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭ শতাংশ। অতিদারিদ্র্যের হার ৫.৬ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সালে সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪.৩ শতাংশ। ওই বছর দেশে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী ছিল ১২.৯ শতাংশ। তবে ছয় বছর পর দেশে প্রতি পরিবারে খরচ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। ২০২২ সালে একটি পরিবারের মাসে গড় খরচ ছিল ৩১ হাজার ৫০০ টাকা, ২০১৬ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৭১৫ টাকা।

বিবিএস সারা দেশের ৭২০টি নমুনা এলাকায় এই জরিপ পরিচালনা করে। প্রতিটি নমুনা এলাকা থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ২০টি করে মোট ১৪ হাজার ৪০০ খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপকাজটি ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়।

বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সামগ্রিকভাবে ২০২২ সালে দেশের পল্লী এলাকাগুলোতে দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ এবং শহরে ১৪.৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৬ সালের জরিপে পল্লী এলাকায় দারিদ্র্যের হার ছিল ২৬.৪ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ছিল ১৮.৯ শতাংশ। ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী পল্লী এলাকায় অতিদারিদ্র্যের হার ৬.৫ শতাংশ এবং শহর এলাকায় ৩.৮ শতাংশ।

আয়ের অর্ধেক ব্যয় খাদ্যপণ্য কেনায় : বিবিএসের জরিপ বলছে, ২০২২ সালে একটি পরিবারে যে আয় হয়, এর প্রায় অর্ধেক চলে যায় খাদ্যপণ্য কেনায়। অর্থাত্ খাদ্যপণ্য কেনায় একটি পরিবারে ব্যয় ৪৫.৮ শতাংশ। তবে এই ব্যয় খাদ্যদ্রব্যবহির্ভূত ভোগ্য পণ্য সম্পর্কিত ব্যয়ের চেয়ে কম। অর্থাত্ খাদ্যদ্রব্যবহির্ভূত ভোগ্য পণ্যের পেছনে খরচ বেড়েছে, যা ৫৪.২ শতাংশ। ২০১৬ সালে যা ছিল যথাক্রমে খাদ্যপণ্যে ৪৭.৭ শতাংশ এবং খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে ৫২.৩ শতাংশ। তবে বর্তমানে জনপ্রতি দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ইতিবাচকভাবে বেড়েছে। বর্তমানে জনপ্রতি ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ দৈনিক দুই হাজার ৩৯৩ কিলোক্যালরি, যা ২০১৬ সালে ছিল দুই হাজার ২১০ কিলোক্যালরি।

পরিবারের মাসিক আয় বেড়েছে : জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জরিপে অংশ নেওয়া খানার আয় বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। বর্তমানে খানার গড় মাসিক আয় ৩২ হাজার ৪২২ টাকা, যা ২০১৬ সালে ছিল ১৫ হাজার ৯৮৮ টাকা এবং ২০১০ সালে ছিল ১১ হাজার ৪৭৯ টাকা।

বৈষম্য বেড়েছে : ‘খানার আয় ব্যয় জরিপ-২০২২’ প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই বছর বৈষম্য বেড়েছে। মূলত গিনি সহগের মান দিয়ে বৈষম্যের হিসাব করা হয়। গিনি সহগের (আয় ও সম্পদ বণ্টনের অসমতা বোঝানোর সূচক) মান যত বেশি হবে, ওই সমাজে বৈষম্য তত বাড়বে বলে ধরা হয়। বর্তমানে আয়ের জন্য গিনি সহগের মান ০.৪৯৯, যা ২০১৬ সালে ছিল ০.৪৮২ এবং ২০১০ সালে ছিল ০.৪৫৮। এতে দেখা যায়, বৈষম্য বেড়েছে। অন্যদিকে ২০২২ সালে ভোগব্যয়ের জন্য গিনি সহগের মান ০.৩৩৪, যা ২০১৬ সালে ছিল ০.৩২৪ এবং ২০১০ সালে ছিল ০.৩২১।
প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থায় খানার (পরিবার) অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। প্রতিবেদনে তারা বলছে, বর্তমানে প্রায় ১৪.১ শতাংশ খানার অন্তত একজন সদস্য জরিপের আগের ১২ মাসে ব্যাংক হিসাব খুলেছে, যা ২০১৬ সালে (৭.৫ শতাংশ) এবং ২০১০ সালের (৭.৪ শতাংশ) তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। এতে প্রাতিষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থায় খানার অন্তর্ভুক্তিমূলক অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে।

জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক অবস্থার অগ্রগামিতা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে খানার আয় ও ব্যয় জরিপে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে বিদ্যুত্ সুবিধাভোগী খানার হার ৯৯.৩২ শতাংশ, যা ২০১৬ ও ২০১০ সালে যথাক্রমে ছিল ৭৫.৯২ শতাংশ ও ৫৫.২৬ শতাংশ। অর্থাত্ বর্তমানে দেশে বিদ্যুতায়নের হার প্রায় শতভাগ।
একইভাবে ৯২.২১ শতাংশ খানা উন্নত টয়লেট সুবিধার আওতাধীন এবং ৯৬.১ শতাংশ খানায় নিরাপদ খাবার পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এই জরিপের ফলাফল দেখে যেটা প্রতীয়মান হয়েছে, তা হলো আমাদের দরিদ্রতা শ্লথ হয়েছে। তবে বেড়েছে আয়বৈষম্য ও ভোগবৈষম্য। সেটি এখন ভাবার বিষয়। যদি এটা ক্রমাগত বাড়তে থাকে, তাহলে প্রবৃদ্ধির ওপর আঘাত হানবে।’

তিনি বলেন, বৈষম্যের পেছনে রয়েছে ন্যায্যতার অভাব এবং শোভন কর্মসংস্থান ও নানা বিষয়। সুতরাং সরকারকে এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে প্রবৃদ্ধি ও দেশের উন্নয়নের জন্য।

জরিপে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে সাত বছর এবং তদূর্ধ্ব বয়সীদের সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ, যা ২০১৬ ও ২০১০ সালে যথাক্রমে ছিল ৬৫.৬ শতাংশ ও ৫৭.৯১ শতাংশ। অর্থাত্ সাক্ষরতার হার ক্রমেই বাড়ছে। কমেছে মাইগ্রেশনের (অভ্যন্তরীণ স্থানান্তর) হার। ২০২২ সালে এই হার ছিল ১০.৪৭ শতাংশ, ২০১৬ সালে তা ছিল ১১.২২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও পদক্ষেপের কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে আজকের প্রতিবেদনে। আমরা করোনার প্রকোপ কাটিয়ে উঠেছি সরকারের প্রণোদনা ও বিনা মূল্যে খাদ্য প্রদানের কারণে। আমরা করোনার সময় কলকারখানা বন্ধ করিনি, যেটা অর্থনীতিকে সচল রেখেছে। এর ফল আজ ভোগ করছি।’

এ সময় প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, গ্রামে দরিদ্রতার হার কমেছে। এটা নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। তবে সরকারের বেশির ভাগ সুফল ভোগ করেছে গ্রামের মানুষ। তাই দরিদ্রতা শহরের তুলনায় কমেছে। তিনি বলেন, ‘বিবিএসের তথ্য নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই। তারা মাঠে গিয়ে কাজ করে ফলাফল দেয়। তথ্য বানানোর বা দেখানোর কিছু নেই এখানে।’