ঢাকারবিবার, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মিয়ানমারের ২২ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফে, চলছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তথ্য যাচাই

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ১৫, ২০২৩ ৩:২৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

মিয়ানমারের ২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আজ বুধবার (১৫ মার্চ) সকালে টেকনাফ দম দমিয়া ট্রানজিট ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছেন। বাংলাদেশের পাঠানো রোহিঙ্গাদের তালিকা যাচাই করতে প্রতিনিধি দলটির এই সফর। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে প্রতিনিধি দল কক্সবাজারের টেকনাফে আসেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। 

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের তালিকায় বাদ পড়া পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শুরু করেছে মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিনিধি দলটি। এর আগে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।

এদিকে, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটির আগমনকে ঘিরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় নতুন সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি) সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পাঠানো তালিকা থেকে মিয়ানমার যে সকল রোহিঙ্গাকে তাদের নাগরিক হিসেবে যাচাই-বাছাই করে ফিরতি তালিকা দিয়েছিল- তা নিয়ে দুই দেশের এই বৈঠক। মিয়ানমারের যাচাইকৃত তালিকার অনেক রোহিঙ্গা দম্পতির পরিবারেই নতুন করে সন্তান জন্ম নিয়েছে। আর এর সত্যতা যাচাই করতে মূলত এই বৈঠক।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, ‘আজ বুধবার সকালে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের টেকনাফে এসে পৌঁছেছেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আলাপ-আলোচনার পর তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন।’

২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসার পর মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। সেসময় ওই প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে। প্রতিনিধি দলটি মিয়ানমারে ফিরতে রোহিঙ্গাদের শর্ত দিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তাতে রাজি হননি রোহিঙ্গারা।

বুধবার (১৫ মার্চ) সকাল ১১টায় টেকনাফ সদরের নাফনদ তীরের স্থলবন্দরের ভেতরে একটি ভবনে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎকার শুরু হয়। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধিসহ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত আছেন।

বাসে করে লেদা-নয়াপাড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী ২০ পরিবারের ৭০ জন রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে টেকনাফ স্থলবন্দরের ভেতরে রেস্ট হাউসে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তারা প্রতিনিধিদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে উদ্যোগী হওয়ায় মিয়ানমারের পাইলট প্রকল্পের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। তবে এর আগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়নের তিন মাসের মাথায় ২০১৭ সালের নভেম্বরে প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি সই হলেও গত প্রায় ছয় বছরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বেঁধে দেওয়া সময়ে এক দফা প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে চীনের মধ্যস্থতায় ২০১৯ সালে আবার প্রত্যাবাসন শুরুর চেষ্টা হয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হয়নি। এরপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এ ঘটনার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোর মুখ দেখেনি।

এর আগে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৬২ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশের দেওয়া এই তালিকা যাচাই-বাছাই শেষে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মিয়ানমার। শুরুতে পরিবারভিত্তিক প্রত্যাবাসনের আওতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেওয়ার কথা এখন বলা হচ্ছে। তালিকার বাইরে পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটির রুটম্যাপ নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান জানান, রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাচাই করা হচ্ছে। মূলত ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ৮ লাখ ৮২ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়। এরপর মিয়ানমার ৬৮ হাজার রোহিঙ্গার ফিরতি তালিকা পাঠায়। সেখানে অনেক পরিবারের সদস্য বাদ পড়ে। বিষয়টি তাদের (মিয়ানমারকে) জানানো হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে তারা (মিয়ানমার) আগ্রহ প্রকাশ করে। বাদ পড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে তারা কথা বলছেন, কেন বাদ পড়েছেন এবং তাদের দলিলপত্র দেখছেন।’

মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিতে আসা টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নেতা মো. জাফর জানান, ‘মিয়ানমার থেকে আাসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আামদের ডাকা হয়েছে। আমার মতো আরো অনেকে এসেছে। মূলত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। সাক্ষাৎ শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।