কেরানীগঞ্জের ঘাটারচরে আজ রোববার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি সমাবেশে’ প্রধান অতিথি ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশের মঞ্চে অনেক নেতার উপস্থিতি দেখে তিনি বলেন, ‘নেতায় নেতায় স্টেজ ভাঙে, আমি বেচারা আহত হই। মঞ্চে কত নেতা! বুড়া নেতা, আধুলি নেতা, সিকি নেতা, পাতিনেতা। মঞ্চে এত নেতার তো কোনো দরকার নেই।’ তিনি উপস্থিত জনতার কাছে জানতে চান—কী কাজ করেন এই নেতারা?
বিএনপির ‘সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ষড়যন্ত্রমূলক অপরাজনীতির’ বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির খবর জানতে চেয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির শেষ খবর কী? বিএনপি এখন খরার কবলে। বিএনপি অসুস্থ হবে, অচিরেই হাসপাতালে যাবে। নির্বাচনে না গেলে আইসিইউতে যাবে।’
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লাফালাফি শুরু করেছেন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণ নাই, ঢাল নাই, তলোয়ার নাই, নিধিরাম সরদার।
নেতা-কর্মী ছাড়া আন্দোলন, সেই আন্দোলন চলে না। নির্বাচনে আসবেন না, ভালো কথা। ২০১৪ সালে আপনারা আসেননি, বয়কট করেছেন, নির্বাচন কি হয়নি?’
নির্বাচনে বাধা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘যে হাতে আগুন নিয়ে আসবেন, সেই হাত আমরা পুড়িয়ে দেব। যে হাতে ভোটকেন্দ্র পোড়াতে আসবেন, ভাঙচুর করতে আসবেন, সেই হাত ভেঙে ফেলব।’
বিএনপির মতিগতি ভালো নয় মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি উল্টাপাল্টা কথা বলতে শুরু করেছে। তাদের আন্দোলনের গতি যত কমছে, অভিযোগের সুরও তত চওড়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের আন্দোলনে তো জনগণ নেই। নেতা-কর্মীও কমে গেছে। কারণ, ফখরুল সাহেব ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসনের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নে অনেকে কাঁথা-বালিশ, হাঁড়ি-পাতিল নিয়ে, মশার কয়েল, লোটা–কম্বল নিয়ে সমাবেশস্থলে সাত দিন আগে থেকেই হাজির হয়েছিলেন।’
আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় এই নেতা বলেন, ‘গত ১০ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশের (বিএনপির মহাসমাবেশ) পরদিন ১১ ডিসেম্বর সবাইকে বিমানবন্দর ছুটে যেতে বলা হয়েছিল। সেখানে নাকি হাওয়া ভবনের একসময়ের ‘‘যুবরাজ’’ (তারেক রহমান), বর্তমানে টেমস নদীর তীরে পলাতক, যিনি মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন, নাকি ফিরে আসবে। গোলমাল পাকিয়ে শেখ হাসিনাকে হটানো যাবে না।’ ১৯৭৫ আর ২০২৩ সাল এক নয় বলেও বিএনপিকে হুঁশিয়ার করে দেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার অস্বাভাবিক সরকার মন্তব্য করে সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনে আপনারা (বিএনপি) না এলে জোর করে আনতে যাব না। কিন্তু নির্বাচন হতে দেবেন না, এমন কথা বললে খবর আছে। কত ধানে কত চাল, আমরাও দেখে নেব।’
বক্তৃতা মঞ্চে উঠে শুরুতেই স্লোগান থামাতে বলার পরও কর্মীরা নিজেদের সমর্থিত নেতার নাম বলে স্লোগান দিতে থাকলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমি সবার অবস্থা জানি। কার কী অবস্থান, জনপ্রিয়তা, প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘‘এসিআর’’ জমা আছে। কাজেই ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ড দেখিয়ে জনপ্রিয়তা প্রমাণ করা যায় না।’
পোস্টার-ব্যানার নামাতে বলে জনপ্রিয় একটি বাংলা গানের কথার সঙ্গে মিলিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এই পোস্টার, ফেস্টুনের ছবি ছিঁড়ে যাবে, ব্যানারের ছবি মুছে যাবে, পাথরে লিখবে নাম ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লেখো নাম রয়ে যাবে।’
সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বেহায়া বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার চায়। যেটা সংবিধানে নেই, তা বাংলার মাটিতে ফিরিয়ে আনার প্রশ্নই ওঠে না। বিএনপি আগেও ঠিকমতো নির্বাচন করেনি। তারা মনোনয়ন–বাণিজ্য করেছে, তামাশা করেছে। ফল হিসেবে সংসদে তাদের আসন মাত্র সাতটি।’
সামনের নির্বাচনে বিএনপি নেতা আমানউল্লাহর সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান জানিয়ে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করব। এবার নির্বাচন ঠিকমতো না করলে, আপনাদের কর্মীরাই ধাওয়া দেবে। তখন পালানোর পথ পাবেন না।’