ঢাকাবৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

প্রশান্ত কিশোর:নির্বাচনে জেতানোই যার পেশা

মো. নিজাম উদ্দিন | রাজনৈতিক বিশ্লেষক
জানুয়ারি ২৪, ২০২৩ ৮:৫৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

এক.

বিগত কয়েক বছর যাবত প্রশান্ত কিশোর ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত আলোচিত এক নাম।যিনি পিকে নামেও পরিচিত।তিনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে জরিত নন,কোনো নেতাও নন, তবে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করেন।তিনি ভারতের প্রখ্যাত পলিটিকাল ট্রাটেজিস্ট বা রাজনৈতিক কৌশলবিদ।তার মূল কাজটা হচ্ছে কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তিকে কিভাবে নির্বাচনে জয়ী করানো যায় সেই কৌশল প্রনয়ণ করে ঐ দল বা ব্যক্তিকে নির্বাচনে জয়ী করা।বিনিময়ে খুব মোটা অংশের টাকা নেন তিনি। শুনে অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ এটাই প্রশান্ত কিশোর বা পিকের পেশা।১৯৭৭ সালে বিহারে জন্ম প্রশান্ত কিশোরের।হায়দ্রাবাদে ইঞ্জিনিয়ারিং এ পাঠ চুকিয়ে জাতিসংঘের ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৩ সালে। আফ্রিকায়।কাজ করতেন ইউনিসেফে,পাবলিক হেল্থ নিয়ে।২০১১ সালে তিনি চাকরিটা ছেড়ে ভারতে ফিরে আসেন।নতুন চিন্তা ভর করে মাথায়।সিন্ধান্ত নেন নতুন কিছু করবেন।যেখানে নিজের মেধা ইনভেস্ট করে টাকা ইনকাম করা যায়। সেই চিন্তা থেকেই গড়ে তুললেন -সিটিজেন ফর একাউন্টেবল গভর্নেন্স।বা সিএজি নামক একটি ব্যতিক্রম ধর্মী ফার্ম।সেখানে উচ্চ শিক্ষিত একদল ভারতীয় তরুণকে নিয়োগ দেন যারা তথ্য প্রযুক্তি ও পলিসিটা খুব ভালো বুঝেন।

দুই.

২০১২ সাল।ভারতের গুজরাট বিধান সভার নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদির মাথায় তৃতীয় বারের মতো গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার তীব্র আকাঙ্খা।কিন্তু হতাশাও তাকে পেয়ে বসেছে!কিভাবে নির্বাচনী লড়াইয়ে জয়ী হওয়া যায় সেই চিন্তায় মোদির ঘুম হারাম।

একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় মোদির প্রতি মানুষের এমনিতেই একটি বাজে ধারণার জন্ম হয়,গুজরাট দাঙ্গার দায় তো ছিলই।প্রচন্ড রকম ইমেজ সংকটে ভুগছিলেন সেই সময় মোদি।একাধিক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় তৃতীয় মেয়াদে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার গল্পটা মোদির জন্য সহজ ছিল না।তাই মোদি এমন একজন পলিটিকাল মাস্টার মাইন্ড খোঁজছিলেন যিনি মোদিকে নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে সহযোগিতা করতে পারেন।পেয়েও গেলেন অবশেষে। নাম তার প্রশান্ত কিশোর বা পিকে ও তার ফার্ম সিটিজেন ফর একাউন্টেবল গভর্নেন্স (সিএজি)।আমাদের পার্শবর্তী ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধান সভার ২৯৪ আসনে নির্বাচন২০২১ সালেও পুরো বিশ্ব মমতার পক্ষে পিকে মডেল দেখেছে।

 

 

তাকে নিয়ে তুমুল আলোচনা আর সমালোচনায় ব্যস্ত থেকেছে ভারতের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।রাজনীতির বাইরের লোক হয়েও পশ্চিম বঙ্গের নির্বাচনে মোদি, মমতা,অমিত, নাড্ডাকে ছাড়িয়ে আলোচনায় সেই প্রশান্ত কিশোর-পিকে!কারণ সেখানেও তিনি ও তার ফার্ম মমতা ব্যানার্জীর তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে জিততে কাজ করেছেন এবং সফল হয়েছেন।বিজেপি সেখানে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া ছিল,তৃণমূল কংগ্রেসের মুকুল রায় কিংবা সুবেন্দু অধিকারীর মত জাদরেল নেতারা যখন দল বদল করে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাচ্ছে সেই সময় তৃণমূলের হয়ে প্রশান্ত কিশোর ঘোষণা দিয়ে বসলেন -পশ্চিম বঙ্গের নির্বাচনে বিজেপি দুই ডিজিটও অতিক্রম করতে পারবে না! যদি অতিক্রম করে তাহলে পলিটিকাল ট্রাটেজিস্ট হিসাবে তার পেশায় আর থাকবেন না,ছেড়ে দিবেন!হলোও তাই। দুইশোর বেশি আসনে জিতলো মমতা!

তিন.

এত আত্মবিশ্বাসের জায়গাটা প্রশান্ত কিশোরের কোথায়? কীভাবে এসব চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেন পিকে?উত্তরে তিনি বলেন-গবেষণা!হ্যা গবেষণা ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর প্রচার কৌশল।তিনি বুথ বা কেন্দ্র ধরে ধরে প্রথমে দলের সাফল্য ব্যর্থতার গল্প শুনেন।গবেষণা করেন কেন কীভাবে কি করে সফল হওয়া যায়। এবং সেভাবেই নির্বাচনে জেতার পলিসি প্রণয়ন করেন এবং চুক্তি বদ্ধ রাজনৈতিক দলকে কাজ করার নির্দেশ দেন। কয়েকটি কম্পিউটার ও কিছু এক্সপার্ট তরুণই তার কাজের মূল শক্তি যারা তথ্য প্রযুক্তি ও পলিসিটা ভালো বুঝেন।আর নিজের মেধা বুদ্ধি। হ্যা এটাই পিকের পেশার একমাত্র পুঁজি! তো ২০১২ সালে প্রশান্ত কিশোর-পিকের পলিটিকাল স্ট্রাটেজি প্রয়োগ করে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদি।সেই সময় মোদির “চায় পে চর্চা”এবং “রান ফর ইউনিটি”কর্মসূচী দারুণ সারা ফেলে দেয় রাজ্য জুড়ে।তৃতীয় বারের মতো গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর মোদির চোখ পড়ে লোকসভার নির্বাচন-২০১৪ এ!লক্ষ্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়া, বিজেপিকে ক্ষমতায় বসানো।গুজরাটের নির্বাচনে আশাতীত ফলাফল পেয়ে দেশ ব্যাপী প্রথম বারের মতো তুমুল আলোচনায় চলে আসেন প্রশান্ত কিশোর।কে এই প্রশান্ত কিশোর? এই নিউজ কভার করতে করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সকল গণমাধ্যম। পিকের উত্থানের গল্পটি এরকমই।তিনি পেশাদার পলিটিকাল স্ট্রাটিজিস্ট।টাকার বিনিময়ে কাজ করেন।কাউকে নির্বাচনে জেতানোর কৌশল বাতলে দেওয়াও কোনো পেশা হতে পারে -দক্ষিণ এশিয়ায় এমন ব্যতিক্রম ধর্মী উদ্যোগ ও কাজ এর আগে মানুষ খুব কমই দেখেছে।এ ধরনের কাজও কারো পেশা হতে পারে এটা পাশ্চাত্য দুনিয়ায় অহরহ দেখা গেলেও এশিয়ার এ অঞ্চলে নতুন ও ব্যতিক্রমী ঘটনাই বটে।রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এটা একটা ভিন্ন পথ।সময়ের চাহিদাও বটে।

চার.

মোদির উত্থানের পেছনে প্রশান্ত কিশোরের ভূমিকা বর্ণনা করার আর প্রয়োজন নেই।মোদিকে গুজরাট থেকে নয়াদিল্লির রাজনীতির নিয়ন্ত্রক হিসাবে প্রতিষ্ঠায় মোদির পরে যদি কারো বিশেষ ভূমিকা থেকে থাকে সেটা প্রশান্ত কিশোর।২০১৪ সালে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ে প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। যার মাস্টার মাইন্ড ছিলেন প্রশান্ত কিশোর।কিন্তু নির্বাচনে জয়ের পর বিজেপির অমিত শাহ সহ শীর্ষ স্থানীয় নেতৃত্বের সাথে মনোমালিন্য তৈরি হলে বিজেপির সাথে সম্পর্ক চুকিয়ে নেন প্রশান্ত কিশোর। এবার নিজেকে আরো যোগ্য করে তৈরি হন।সিটিজেন ফর একাউন্টেবল গভর্নেন্স বা সিএজি বিলুপ্ত করে প্রশান্ত কিশোর নতুন একটি পলিটিকাল স্টাটিজি ফার্ম গড়েন, নাম যার ইন্ডিয়ান পলিটিকাল একশান কমিটি বা সংক্ষেপে(I -PAC).এই সংস্থাটি তিনি কানাডার পলিটিকাল একশান কমিটির আদলে গড়ে তুলেন।যেটি আমেরিকায় নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে ট্রাটিজিস্ট হিসাবে কাজ করে।২০১৫ সালে ডাক পড়ে বিহারের বিধান সভার নির্বাচনে নীতিশ কুমারের হয়ে কাজ করার।নীতিশের মাঠের অবস্থা তখন খুব একটা ভালো ছিল না।সেই সময় পিকে ও তার ফার্ম নীতিশের বক্তব্য লিখে দিত।পিকের কথা গুলোই নীতিশ কুমার জনসভায় তার মুখে বলতেন।”বিহারী বনাম বাহারী”

স্লোগান ব্যাপক জমে উঠে ফলে আবারও জয়ী হয় জনতা দল।জনতা দল ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলে জোট গঠন করে লড়াইয়ে নামার কৌশলটাও পিকের ছিল।ফলে অতীতের মতোই বিহারেও পিকের রাজনৈতিক কৌশল জয়ী হলো।সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়লো পিকের নাম।মুখ্যমন্ত্রী হলেন নীতিশ কুমার।

পাঁচ.

২০১৫ সালে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ডাক পড়ে প্রশান্ত কিশোরের।সফলতা সেখানেও হাতছানি দিয়ে ডাকে।পিকের নির্বাচনী কৌশল প্রয়োগ করে সেবার জন মাগফুলি প্রেসিডেন্ট এবং চামাচা মাপিন্দুজি তানজানিয়ার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।রাহুল গান্ধীকে ২০০৭ সালে পিকে ভারতের স্বাস্থ্য খাতে তার একটি পলিসি ভারতে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু রাহুল তাকে হতাশ করেন।বলেন রাহুলের নির্বাচনী এলাকা আমেতিতে একটি হসপিটাল করে আগে কাজটা দেখাতে।ফলে রাহুলের কাছ থেকে মুখ ফেরান পিকে।কিন্তু ২০১৭ সালে পাঞ্জাবের বিধান সভার নির্বাচনে কংগ্রেস নেতা অমরিন্দর সিংহ প্রশান্ত কিশোরের শরণাপন্ন হন।পিকেও রাজি হন।চুক্তি বদ্ধ হন পাঞ্জাব কংগ্রেসের সাথে।পিকের কৌশলে পাঞ্জাবে অমরবিন্দর পক্ষে স্লোগান উঠে -“পাঞ্জাব ক্যাপ্টেন,ক্যাপ্টেন অব পাঞ্জাব”।এখানেও সফল হন পিকে।

তবে ২০১৭ সালে উত্তর প্রদেশ বিধান সভার নির্বাচনে পিকে প্রথম বারের মতো ব্যর্থ হন।সেবার রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস তাকে ভাড়া করেছিল কিন্তু কংগ্রেস সেসময় উত্তর প্রদেশে সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়।তবে উত্তর প্রদেশে ব্যর্থ হওয়ার কারণ হিসাবে প্রশান্ত কিশোরের পলিসিকে সেরকম ভাবে কংগ্রেস কর্তৃক বাস্তবায়ন না করাকেও দায়ী করা হয়।কারণ উত্তর প্রদেশ বিধান সভার নির্বাচনে পিকের কৌশল ছিল প্রিয়াংকা গান্ধীকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দাঁড় করানো কিন্তু কংগ্রেস পিকের এই সিদ্ধান্তের উল্টো পথে হাটে।ফলাফলও ঘরে আসেনি।প্রথম বারের মতো ব্যর্থ হয় প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক কৌশল।কিন্তু ২০১৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ বিধান সভার নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোর জিতিয়ে আনেন ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টির জগন্মোহন রেড্ডিকে।মি.রেড্ডিও সেই সময় তার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া নিয়ে যথেষ্ট আশংকায় ছিলেন।কিন্তু প্রশান্ত কিশোরের রাজনৈতিক কৌশল জাদুর মতো কাজ করে।

২০২০ সালে দিল্লির বিধান সভার নির্বাচনে প্রশান্ত কিশোর আম আদমি পার্টির হয়ে কাজ করেন।আমি আদমি পার্টির প্রচার কৌশল সে সময় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।মানুষ বুঝতে পেরেছিল আম আদমির বিকল্প নেই।ফলে তৃতীয় বারের মতো দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন আন্না হাজারের সাথে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল।অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাফল্যের গল্প শুনি কিন্তু পর্দার আড়ালের পিকের কথা কজন জানে?যার কৌশলে জিতেন কেজরিওয়াল।

ছয়.

সর্বশেষ ভারতের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ৪২টি আসনের মধ্যে পশ্চিম বঙ্গে ১৮ টি আসনে জয়ী হয়।অথচ এর আগের নির্বাচনে বিজেপির মাত্র দুটি আসন ছিল ওখানে। বিষয়টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য খুব চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো যাকে তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড পাওয়ারফুল লিডার মনে করা হয় সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশান্ত কিশোরের দারস্থ হন।সেটা ২০১৯ সালের কথা।তখন তৃণমূলের টার্গেন ২০২১ সালের পশ্চিম বঙ্গের বিধান সভায় নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখা। বিজেপি মনে করে পশ্চিম বঙ্গে তারা সরকার গঠন করতে পারলে তাদের ষোল কলা পূর্ণ হবে।অন্যদিকে তৃণমূল নুন্যতম ছাড় দিতে রাজি নয়।মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১ সালের বিধান সভার নির্বাচনে জন্য এবার পলিটিকাল ট্রাটিজিস্ট হিসাবে নিয়োগ দেন আলোচিত প্রশান্ত কিশোরকেই।তার ট্রাটেজি অনুসরণ করেই নির্বাচনী লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিম বঙ্গের সর্বশেষ বিধান সভায় জয় লাভ করে।

মমতার আলোচিত “দিদিকে বলো” কর্মসূচীটিও পিকের ব্রেইন চাইল্ড।পশ্চিম বঙ্গের গণমাধ্যমে এখন প্রশান্ত কিশোর এক বিশেষ আলোচিত নাম।কেউ কেউ তাকে ইন্ডিয়ান প্রেট পলিটিকাল মাস্টার মাইন্ড নামেই চিনে।কেউ বলে ভারতের ‘চাণক্য’!পিকে নেতা নন।নেতা তৈরি করার কারিগর।তার কোনো রাজনৈতিক দল নেই কিন্তু তিনি দলকে জেতানোর রাজনৈতিক কৌশল বাতলে দেন।এখন এটাই তার পেশা।২০১৮ সালে তিনি ইউনাইটেড জনতা দলে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে যোগ দিলেও সে দল ভারতের বিতর্কিত নাগরিকত্ব বিলের পক্ষে অবস্থান নিলে এর বিরোধিতা করে দল থেকে বহিষ্কার হন।পরে আর কোথাও যোগ দেননি।২০২১ সালের পশ্চিম বঙ্গের বিধান সভার নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২৯৪ আসনের মধ্যে দুইশোর বেশি আসনে আবারো জয়ী!

সাত.

এই সময়ে প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে আমি কেন লিখতে গেলাম? কী দরকার এক ভারতীয়কে এখানে টেনে আনার,লম্বা কলাম লেখার?প্রশান্ত কিশোরের এমন কী আছে যা তাকে নিয়োগ দেয়া রাজনৈতিক দল গুলোর ছিল না?নরেন্দ্র মোদি, নীতিশ কুমার, জগন্মোহন রেড্ডি, অরবিন্দ কেজরিওয়াল, অমরিন্দর সিংহ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় -তাদের এমন কী নেই যে প্রশান্ত কিশোরের মতো একজন সাধারণ মানুষের পেছনে ছুটতে হচ্ছে?প্রশান্ত কিশোর বিজেপি,কংগ্রেস, জনতা দল,আমি আদমি পার্টি হয়ে সর্বশেষ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছেন।এই দলগুলো ভারতের রাজনীতিতে অত্যন্ত প্রভাবশালী।এদের জন প্রিয়তাও আকাশচুম্বী।সেটা যেভাবেই হোক না কেন।কিন্তু প্রশান্ত কিশোর প্রমাণ করেছেন এ অঞ্চলে রাজনৈতিক দল গুলোর নির্বাচনে জেতার যে ট্রাডিশনাল বয়ান দীর্ঘদিন যাবত চলে আসছে সেটা অচল,অকেজো ও অর্থহীন।প্রশান্ত কিশোর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন -একটা রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় যেতে হলে কী করতে হয়,রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে কিভাবে মানুষের হৃদয়ে ঝড় তোলা যায়,জয়ী হওয়া যায়?সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজনৈতিক দল গুলোকেও হতে হবে চৌকস,বাস্তববাদী,যুক্তি নির্ভর,পিপলস ওরিয়েন্টেড।
রাজনৈতিক দলকে জনগণের পার্লস বুঝতে পারা জরুরী।আসলে মানুষ কী চায়,কেন চায়?ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান এবং সে অনুযায়ী কাজ করাটা জরুরী।দলের যেকোনো পলিসি প্রণয়নের পূর্বে যথেষ্ট গবেষণা ও বিচার বিশ্লেষণ করার হাজারটা কারণ আছে।রাজনৈতিক দলের শক্তিশালী রিসার্চ এন্ড পলিসি উইং থাকা একেবারেই ফরজ।প্রশান্ত কিশোরের কাজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলোর অনেক সীমাবদ্ধতাও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।পলিটিকাল পার্টিগুলোর মধ্যে ট্রেডিশনাল এক্টিভিটিজের জায়গায় নতুন কিছু বাস্তবতা তৈরি হয়েছে।সেটা সারা পৃথিবীতেই।সেগুলো এভয়ড করার সুযোগ নেই।রাজনীতি একটা যুদ্ধ।সেখানে জেতা এবং হারার একমাত্র কারণ পলিসি।এত বড় বড় রাজনৈতিক দল গুলোর কয়েক কোটি কর্মী সমর্থকের কাফেলা থাকার পরেও কেন পিকের দারস্থ হয়েছে? উত্তর একটাই।সেটা পলিসি। আপনার চিন্তা,কর্মকৌশল মানুষকে আকৃষ্ট করতে না পারলে অনেক প্রাচীন এবং বৃহৎ দল হলেও আপনার ঝুঁকি আছে। প্রশান্ত কিশোর রাজনৈতিক দল গুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে -একটা রাজনৈতিক দলের কী করা উচিত, কী উচিত নয়।

লেখক:রাজনৈতিক বিশ্লেষক