মো. ইউনুস (৫৩)। বাঁশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূলের আতংক রমিজ বাহিনীর প্রধান তিনি। তার বিরুদ্ধে রয়েছে অস্ত্র, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নারী নির্যাতনের অভিযোগে অন্তত ৮টি মামলা। বাঁশখালীতে মালেক হত্যা মামলার অন্যতম আসামি তিনি।
তার অপকর্মের প্রতিবাদ করলে নেমে আসে নির্মম নির্যাতন। নির্যাতনের পাশাপাশি প্রতিবাদকারীকে অস্ত্র ও ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে ছবি তুলে ইউনুসের মোবাইলে জমা রাখা হয়। ভুক্তভোগী থানায় গিয়ে আইনের আশ্রয় চাইলে ইউনুস ছবিগুলো ইন্টারনেটে ভাইরাল করার হুমকি দিতেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের উপস্থিতিতে র্যাবের হাতে অস্ত্রগোলাবারুদ জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ইউনুসসহ ৩৪ জলদস্যু। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাদের ভালো হয়ে যাওয়ার তাগিদ দিলেও বছরখানেক জেলে থাকার পর জামিনে বেরিয়ে আসেন ইউনুস। এরপর কিছুদিন স্বস্তিতে ছিলেন বাঁশখালী উপকূলের মানুষ। আত্নসমর্পণের পর সরকারের বিভিন্ন অনুদান ভোগ করে যাচ্ছিলেন ইউনুস।
ইউনুস ২০১১ সালে ছনুয়া ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৫ ই এপ্রিল ২য় বারের মত মেম্বার নির্বাচিত হন। সর্বশেষ, ২০২২ সালের ১৫ জুন নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে হেরে যান তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাঁশখালী ও চকরিয়া থানায় পলাতক ইউপি সদস্য মো. ইউনুসের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত হত্যা, ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, অস্ত্র আইন, মাদক আইন, সন্ত্রাসী ঘটনাসহ অন্তত ৮টি মামলা রয়েছে।
এদিকে ইউনুসকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রেজাউল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, ছনুয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা রেজাউল হক চৌধুরীর জেঠাতো ভাই এবং একই ইউনিয়নের মধুখালী এলাকার মৃত আবদুল আলীর পুত্র গোলাম রহমানের মধ্যে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। ছোট ছনুয়া মৌজার বিএস ৮২০ ও আরএস ৫২০ নং খতিয়ানের তপশিলি জমির বিরোধ নিয়ে বাঁশখালী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাও হয়।
ভুক্তভোগী গোলাম রহমান বলেন, ‘আদালতের ডিক্রি পাওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ আমাকে জায়গা বুঝিয়ে দেয়। এরপর থেকে আমি জমিটি ভোগ করে যাচ্ছিলাম। আজ সকালে ইউনুস দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার দলবল নিয়ে এসে আমার লবণ মাঠের সব পলিথিন ও লবণ লুট করে নিয়ে যায়। এসময় তারা আমাকে আর লবণ মাঠ না করার জন্য হুমকি দেয়। এ ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে। ঘটনার পরপরই পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেছি। থানা থেকে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর একই ঘটনা ঘটিয়েছিল ইউনুস। আমার জায়গা দখল করার জন্য রেজাউল হক চৌধুরী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ইউনুসকে ব্যবহার করতেছে।’
অভিযোগ স্বীকার করে সাবেক ইউপি সদস্য মো. ইউনুস বলেন, ‘জমিগুলো দেখাশোনা করি আমি। কারণ, আমি রেজাউল হক চৌধুরীর কারবারি। আমার অধীনে অনেক চাষী সেখানে লবণের মাঠ করেছিল। কিন্তু আদালতের রায় গোলাম রহমান পেয়েছে বলে আমাকে মাঠ থেকে উঠিয়ে দেন চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার নির্দেশে কেউ জায়গা দখল করার জন্য যায়নি। আমি গ্রামে যাচ্ছি না অনেকদিন। গ্রামের কারও সাথে আমার তেমন কথাও হয় না। আর আমি গ্রামে গেলে সকালে গিয়ে বিকালে শহরে চলে আসি। শহরে আমার নিজস্ব বাসা। আমি এখানেই থাকি। যে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলতেছে, সেগুলো আমার জেঠাতো ভাইয়ের। আমার জেঠাতো ভাইয়ের পক্ষে আদালতের ডিক্রি আছে।’
মো. ইউনুসের পক্ষে সাফাই গেয়ে রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, ‘ওখানে ইউনুস মেম্বারের বিপক্ষ পার্টি নুরুল আমিন ছানুবীর ইন্ধন আছে।’
এ বিষয়ে জানার জন্য বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কামাল উদ্দিনকে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আনোয়ারা সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) কামরুল সুমন বলেন, ‘আপনি ভুক্তভোগীকে একটা লিখিত অভিযোগ দিতে বলুন। আর বিষয়টি আমি ওসিকে বলে দিচ্ছি।’