মঞ্চে নেতাকর্মীদের ভিড় দেখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বক্তব্য না দিয়ে মঞ্চ ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন। এসময় তিনি মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলেন, ‘তবুও এত লোক কেন? এই ভাবে লোক কেন?’
এরপর মিনিট দেড়েক বক্তব্য দেওয়ার মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ বক্তব্য থামিয়ে তিনি বলেন, ‘তারপরও সবাই দাঁড়িয়ে আছেন এত কথা বলার পরও? আমি কোনো বক্তৃতা করব না। সরেন, সরেন!’ এসময় তিনি মাইক ছেড়ে চলে যেতে চান। সঙ্গে সঙ্গে তার আশপাশ থেকে নেতাকর্মীরা মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। এরপর তাকে আবার বক্তব্য দিতে দেখা যায়।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন চিত্র দেখা গেছে।
বক্তব্যের শুরুতেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আজকের আলোচনার এই সভায় এসে, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এই আলোচনা সভায় কিছু বলতে দাঁড়িয়ে আমি বিব্রতবোধ করছি। কারণ, তিন তিন বারের সাধারণ সম্পাদক যখন আমাকে বলে তখন আমি লজ্জা পাই শৃঙ্খলার অভাব দেখে।’
তিনি বলেন, ‘মুখে বলি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বলি শেখ হাসিনার কর্মী, কিন্তু আমরা যখন সবাই নেতা হয়ে মঞ্চে উঠি তখন আমাদের আদর্শের কথা মনে থাকে না। এত নেতা, নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা মুশকিল। নেতার ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ পর্যন্ত ভাঙ্গল। এত নেতার তো আমাদের দরকার নেই।। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট কর্মীবাহিনী দরকার। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সুশৃঙ্খল আওয়ামী লীগ চাই।’
সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘কোথায় আজ শৃঙ্খলা? এখন আমাদের নেতারা মঞ্চে বসেন, বক্তৃতা করতে না পারলে মুখের ওপর শ্রাবণ-বর্ষার আকাশের মেঘ এসে পড়ে। সবার বক্তৃতা দিতে হবে কেন? ভাগ ভাগ করে, ওমুক দিন ওমুক বলবে। দলকে শৃঙ্খলায় আনতে হবে। তৃতীয় বার জেনারেল সেক্রেটারি হয়ে আমার অঙ্গিকার আওয়ামী লীগকে সুশৃঙ্খল করে গড়ে তুলবো। আওয়ামী লীগকে কলহমুক্ত করতে হবে। আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে যারা চাঁদাবাজি করবে, মাস্তানি করবে, মাদকব্যবসা করবে, জমি দখল করবে, তাদের সঙ্গে কোনো আপস হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আপসহীন লড়াই চলবে।’
তিনি বলেন, ‘মঞ্চে বসে আছেন ধরেন ৫০ জন, সবাইকে বিশেষণ দিয়ে দিয়ে নাম বলতে হবে কেন? যে সভার যে সভাপতি, প্রধান অতিথি…। সময় কমান বক্তৃতার সময় বাড়ান। ২০ জন দিতে দিতে সবার অবস্থা কাহিল। আর কিছু মানুষ আছেন জামা পাঞ্জাবি টানলেও বসতে চায় না। ভাষণ দিয়েই যাচ্ছে। সেই ভাষণের মধ্যে কোনো সার কথা নেই। বলছে তো বলছেই, গাড়ি চলছেই। ভাই!! ম্যারাথন ভাষণগুলো বন্ধ করুন। সার কথা বলুন। যারা ভালো বলেন, তাদের বলতে দিন। যারা কাজ ভালো পারেন তাদের কাজ করান, কেউ বক্তৃতা ভালো পারে, তাকে দিয়ে বক্তৃতা করান। আমার দরকার মানুষের সাথে সেতু তৈরি করা। সেই সেতু তৈরি করতে হলে আপনাকে সেই ভাবে কথা বলতে হবে।’