ঢাকাবুধবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের নজরুল বিষয়ক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জানুয়ারি ৯, ২০২৩ ৭:৪৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির দামপাড়াস্থ কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে ইংরেজি বিভাগের উদ্যোগে ‘পয়েট নজরুল ইন এ গ্লোকাল পার্সপেক্টিভ’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ০৯ জানুয়ারি ২০২৩, সোমবার, বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সমাজবিজ্ঞানী, একুশে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন। উদ্বোধক ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক ছিলেন প্রসিদ্ধ নজরুল স্কলার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. উইন্সটন লেংলি এবং কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. র‌্যাচেল ম্যাকডরমট। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান। উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. কাজী শামীম সুলতানা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেন, প্রাচীনকাল থেকে এদেশে বিদেশিরা এসেছে। এদেশে আর্য এসেছে, পাঠান এসেছে, মোঘল এসেছে, হুন এসেছে। তারা এখানে এসে একসঙ্গে লীন হয়েছে। এদেশে ব্রিটিশরাও এসেছিল। তবে এখানে আসা অন্যদের সঙ্গে তারা লীন হয় নি, এদেশের বাসিন্দা হয় নি। তারা ১৭৫৭ সালে এদেশ দখল করে নেয় এবং তিন বছরের মধ্যে এদেশ থেকে তৎকালীন ৫০০কোটি পাউন্ডের সম্পদ লুণ্ঠন করে এবং সেই সম্পদ দিয়ে ১৭৬০ দশকে ইংল্যান্ডে ১ম শিল্পবিপ্লব সংঘটিত করে। তাদের ঔপনিবেশিক শাসন ও লুণ্ঠন ১৯০ বছর চলেছিল। নজরুলের বিদ্রোহ ছিল এই ঔপনিবেশিক শাসন ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংরেজদের ঔপনিবেশিক শাসন ও লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে এদেশে জাতীয়তাবাদী স্বাধীনতা আন্দোলন গড়ে উঠে। নজরুল তাঁর বিভিন্ন কবিতা ও গানে এই আন্দোলনকে তুলে ধরেছিলেন। নজরুল তাঁর বিদ্রোহকে তাঁর কবিতা ও গানে মহাবিদ্রোহে রূপ দিয়েছিলেন।

ড. সেন আরও বলেন, নজরুল বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্বাধীনতার কবি। তাঁর সঙ্গে কেবলমাত্র তুলনা চলে হাইনের, কিছুটা বায়রনের। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু বলেছিলেন, আমরা যুদ্ধে ও জেলে যাওয়ার সময় নজরুলের কবিতা পড়বো, গান গাইবো। ড. সেন উল্লেখ করেন, নজরুল ইসলাম এই বিশ্বে সাম্যেরও একজন মহাসাধক।

উদ্বোধকের বক্তব্যে কলা ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহীত উল আলম ‘গ্লোকাল’ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, নজরুলের চিন্তা ও দর্শনে দেশীয় ও বৈশ্বিক সংস্কৃতির সমন্বয় ঘটেছে। তিনি বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কবি কাজী নজরুল ইসলামের চিন্তার ঐক্য তুলে ধরেন। তিনি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও তাঁর বৈপ্লবিক চেতনা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ দেন।

ম্যাসাচুসেটস ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. উইন্সটন লেংলি তাঁর ‘দ্য আইডিয়া অব পার্মানেন্ট রেভুল্যুশন’ শীর্ষক প্রবন্ধে আমেরিকার স্থপতি টমাস জেফারসন, দার্শনিক কার্ল মার্ক্স, মাও সেতুং ও গান্ধীর বৈপ্লবিক চিন্তার সাথে নজরুলের বৈপ্লবিক চিন্তার স্বরূপ তুলে ধরেন। তিনি নজরুলের বৈপ্লবিক ভাবনাকে মানবতার স্থায়ী সম্পদ বলে অভিহিত করেন। তিনি নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রসঙ্গে বলেন, বিদ্রোহ রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক হতে পারে। এই বিদ্রোহ একটি ভূখণ্ডের বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. র‌্যাচেল ম্যাকডরমট তাঁর ‘দ্যা ফেস অব মিসফরচুন: এক্সপ্লোরিং দ্য ট্র্যাডিশন অব এ ডিসিসড হিরো’ শীর্ষক প্রবন্ধে নজরুলের যৌবন ও বার্ধক্যের অসংখ্য অলোকচিত্র তুলে ধরে তাঁর জীবন ও কর্মের ব্যাখ্যা দেন। নজরুলের কর্ম ও দর্শনের মধ্যেই অবচেতনভাবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও জনগণের মুক্তির আকাক্সক্ষা বপন হয় বলে তাঁর প্রবন্ধে তিনি মত প্রকাশ করেন।

সহকারী অধ্যাপক শান্তনু দাশের সঞ্চালনায় সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান সাদাত জামান খান নজরুলকে অসাম্প্রদায়িক কবি হিসেবে তুলে ধরেন এবং তাঁর বিভিন্ন রচনা সম্পর্কে আলোকপাত করেন।