ঢাকাবুধবার, ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আ.লীগ বিরোধীদের সব কর্মসূচিতে রাজপথে থাকবে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
ডিসেম্বর ৩১, ২০২২ ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর গণমিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানীর ৯টি স্থানে ‘সতর্ক পাহারা’ বসায়। বিকেলের দিকে হয় সমাবেশ। মিছিল নিয়ে এসব সমাবেশে অংশ নেন দলের নেতা-কর্মীরা। বেশির ভাগ কর্মসূচি পালিত হয়েছে সড়কে। কোথাও কোথাও শামিয়ানা টানিয়ে, চেয়ার পাতা হয় ফুটপাতে। এসব স্থানে দলের জ্যেষ্ঠ ও কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।

এসব কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া তিনজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম না প্রকাশ করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের দিন যেভাবে রাজপথে আওয়ামী লীগের আধিপত্য ছিল, একই পরিস্থিতি ছিল গতকালও। দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে কে কোথায় থাকবেন, তা আগেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা ছিল মাঠে থেকে বিএনপিকে ‘মোকাবিলা’ করা। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বোঝানো আওয়ামী লীগ শক্তভাবেই মাঠে আছে। কোনোভাবেই রাজপথ দখলের সুযোগ পাবে না বিএনপি।

বিএনপি কূটনীতিকদের ‘নামিয়েছে’

শ্যামলী স্কয়ারের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অভিযোগ করেন, বিএনপি তাদের পক্ষে কূটনীতিক, বিবৃতিদাতাদের মাঠে নামিয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিবৃতিদাতারা হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অর্থ পাচার ও তারেক জিয়ার নষ্ট রাজনীতিকে সমর্থন করছেন। দূতাবাসে নালিশ করছে, কিন্তু জনগণ ছাড়া কেউ ক্ষমতায় বসাতে পারবে না।’

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তাঁরা (কূটনীতিক ও বিবৃতিদাতা) মির্জা ফখরুলের মুক্তি চান, তিনি নাকি অসুস্থ। তাঁর জন্য বিবৃতিজীবী, বুদ্ধিজীবীরা উদ্বিগ্ন। ১৫ আগস্ট, জাতীয় চার নেতা হত্যা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যার সময় কি আপনারা বিবৃতি দিয়েছিলেন, উদ্বেগ জানিয়েছিলেন? এখন আগুন-সন্ত্রাসের পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছেন।’

ভোটের রাজনীতিতে হেরে বিএনপির নেতারা রেগে যাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘গোস্‌সা করবেন না। আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ চতুর্থবারের মতো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় আনবে। বিএনপি চেয়ে চেয়ে দেখবে, আর দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। হতাশা ও দীর্ঘশ্বাস ছাড়া বিএনপির করার কিছু থাকবে না।’

বিএনপি অনেক ‘লাফালাফি, বাড়াবাড়ি’ করছে দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ছেড়ে দেব না। আক্রান্ত হলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।’

শ্যামলী স্কয়ারের সমাবেশে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপি আরও গুজব ছড়াবে, মিথ্যা ছড়াবে, জনগণকে বোকা বানাতে চেষ্টা করবে। জনগণ আর বোকা হবে না।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন; ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সাত্তার।

তেজগাঁও, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর ও গাবতলী

তেজগাঁও এলাকার ফার্মগেটে সমাবেশে অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।

মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, মিরপুর ১ নম্বর ও গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনেও সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।

জুমার নামাজের পর মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের পূর্ব দিকে রাস্তার এক পাশে জড়ো হন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তাঁরা সমাবেশে আসেন। এতে উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন ও শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার। সভাপতিত্ব করেন মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার।

উত্তরা ও বাড্ডা এলাকাতেও সতর্ক পাহারায় ছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

শাহবাগে ছাত্রলীগের ‘পাহারা’

গতকাল জুমার নামাজের প্রায় তিন ঘণ্টা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘পাহারা’ বসিয়েছিল ছাত্রলীগ। সংগঠনের নেতারা এই পাহারাকে ‘গণতন্ত্রের বিজয় উদ্‌যাপন’ এবং ‘বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস-নৈরাজ্য-দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিবাদে অবস্থান কর্মসূচি বলে উল্লেখ করেছে। ‘পাহারার’ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেছেন, গণতন্ত্রের লাইসেন্স নিয়ে দেশে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখা ও নিজেদের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ রাখার স্বার্থে ছাত্রসমাজ অপশক্তিকে প্রতিরোধের জন্য সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

১৩০ দলের জোটেও কিছু হবে না

যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় গতকাল জুমার নামাজের পর শুরু হওয়া আওয়ামী লীগের সমাবেশ বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে। সেখানে ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, কৃষি ও সমবায় সম্পাদক ফরিদুন্নাহার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম।

সমাবেশে খায়রুজ্জামান মন্তব্য করেন, মানুষের সুখ-শান্তি বিএনপি ও তাদের অনুসারীরা পছন্দ করছে না। তারা ১৩০ দলের জোট করেও আওয়ামী লীগের কিছু করতে পারবে না।