আজ রবিবার খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ‘শুভ বড়দিন’। এই দিনে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এ দিনটিকে শুভ বড়দিন হিসেবে উদযাপন করে থাকে। দিনটি উদযাপনে দেশে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করে, খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক প্রভু যিশু ঈশ্বরের পুত্র। পৃথিবীতে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দিতে, মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালনা করতে এবং সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচারণার লক্ষ্যে প্রভু যিশুর পৃথিবীতে আগমন ঘটে। দুই হাজার ২২ বছর আগে তিনি ঐশীশক্তিতে মা মেরির কোলে জন্মগ্রহণ করেন। মানবজাতির প্রতীক্ষিত মুক্তিদাতা প্রভু যিশু ৩০ বছর বয়সে প্রকাশ্যে খ্রিস্ট ধর্মের প্রচারণা শুরু করেন।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরাও আজ যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গির্জাগুলো সাজানো হয়েছে নতুন আঙ্গিকে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা থেকে বিভিন্ন গির্জা এবং তারকা হেটেলগুলোতে ব্যবস্থা করা হয়েছে আলোকসজ্জার।
বড়দিন উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। দিনটি উপলক্ষে অনেক খ্রিস্টান পরিবারে কেক তৈরি করা হবে, থাকবে বিশেষ খাবারের আয়োজন।
দেশের অনেক অঞ্চলে আয়োজন করা হয়েছে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর। রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে। হোটেলের ভেতর বসানো হয়েছে ক্রিসমাসট্রি। থাকবে বড়দিনের আকর্ষণ শান্তাক্লজ। বড়দিনের প্রাক্কালে গতকাল রাতে বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনাও হয়েছে। আজ সকাল থেকে বড়দিনের প্রার্থনা শুরু হবে।
বড়দিন উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, খ্রিস্ট ধর্মানুসারে যিশুখ্রিস্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত ও আলোর দিশারি। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে তিনি বহু ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও শান্তির বাণী প্রচার করেন। তিনি পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আসার আহবান জানান। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি, ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শিক্ষা দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমি একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানাই। ’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছেন। আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। সব শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশুখ্রিস্টের অন্যতম ব্রত। মহামতি যিশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলির জন্য মানব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।