আওয়ামী লীগ সরকার ও অন্যান্য সরকারের আমলের তুলনা করে জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘সকলকে স্মরণে রাখতে হবে যে, কখন বাংলাদেশের মানুষ উন্নত জীবন পেল; আর কখন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতির কবলে পড়ে মানুষের জীবনমান সম্পূর্ণ ধ্বংসের পথে গিয়েছিল। সেই তুলনা করেই জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তারা কী চায়। ’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার রাজধানীতে তাঁর কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি সম্মিলিতভাবে মোট ২০২১.৫৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক ও মহাসড়কের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
শত সড়ক-মহাসড়ক খুলে দেওয়ার পর তিনি বলেন, ‘বিজয়ের মাসে এটা আমার পক্ষ থেকে জাতির জন্য উপহার। ’
যারা বলে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেছে, দেশের কোনো উন্নয়ন করেনি তাদের কাঠোর সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের শুনতে হয় আওয়ামী লীগ সরকার দেশটা ধ্বংস করে দিয়েছে। এর আগে ১০০টা সেতু আমরা একই সঙ্গে উদ্বোধন করলাম, আর আজকে আমরা ১০০টা মহাসড়ক নির্মাণ বা উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করলাম। আমি জানি না বাংলাদেশের মানুষ এর পরে যারা বলে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে দেশ ধ্বংস করে দিয়েছে, কিছুই নাকি করে নাই, কাজেই দেশের মানুষ তাদের কথা বিশ্বাস করবে কি না সেটাই আমার প্রশ্ন। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সুবিধাগুলো যতটুকুই আপনারা পেয়েছেন, তাতে’৯৬ থেকে ২০০১ এবং ২০০৯ থেকে ২০২২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল বলেই পেয়েছেন। আর স্বাধীনতার পর সেই ’৭২ সাল থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার পথে যত সড়ক ও সেতু নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করেছে এর বাইরে যারা ক্ষমতায় ছিল ’৭৫-পরবর্তী ২১ বছর এবং ২০০১ পরবর্তী ছয় বছরসহ প্রায় ২৯ বছর বা ৩০ বছর তারা দেশের জন্য কী করেছে বা কতটুকু উন্নতি করেছে আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকতে কী করেছে দেশবাসী সেটা অন্তত একটু বিবেচনা করে দেখবে। ’
তাঁর সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের মাধ্যমে প্রযুক্তিকে মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসায় অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগ নিয়ে মিডিয়ায় নানা ঢালাও সমালোচনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সত্য-মিথ্যা অনেক কিছু বলা যেতে পারে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, সাধারণ মানুষের উন্নয়নে, গণমানুষের উন্নত জীবনযাপনের ক্ষেত্রে, জনগণের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে…এবং বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য প্রতিটি বাঙালি যাতে তৈরি হয় সেই লক্ষ্য নিয়েই আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ’
১০০টি সড়ক-মহাসড়কের মধ্যে ৯৯টি সরকারি তহবিল থেকে সম্পন্ন হয়েছে, বাকি একটি এবং ৭০ কিলোমিটার গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মহাসড়ক পর্যন্ত ৬১৬৮.৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এডিবি, ওপেক ও আবুধাবির তহবিলের আওতায়।
প্রধানমন্ত্রী এর আগে গত ৭ নভেম্বর সারা দেশের ২৫টি জেলায় ১০০টি সেতুর উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন করা রাস্তাগুলোর মধ্যে শুধু ৭০ কিলোমিটার বিদেশি ঋণে কাজ হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় দুই পাশে সার্ভিস লেন দিয়ে সড়কটি চার লেন করা হয়েছে। সড়ক ও মহাসড়কের একটি ২২,৭৭৪ কিলোমিটার সড়ক নেটওয়ার্ক রয়েছে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় কৃষিমন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই মানি লন্ডারিং, অগ্নিসন্ত্রাসকারী অথবা গ্রেনেড হামলা করে আইভি রহমানসহ মানুষ হত্যাকারী, দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অন্যের কাছে হাত পাতা—এ ধরনের মানসিকতাসম্পন্ন কেউ যেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমাদের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি বা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না, যারা জয় বাংলা স্লোগান দিতে বিশ্বাস করে না, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা এ দেশের কোনো উন্নতিও চায় না। ’
প্রধানমন্ত্রী সড়কে চলাচলের নিয়ম-কানুনগুলো শিশুকাল থেকেই শেখানোর তাগিদ দিয়ে অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে এবং চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটলে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
কোনো দুর্ঘটনা হলে যিনি দুর্ঘটনাকবলিত অনেক সময় জনগণ তাঁকে সাহায্য না করে গাড়িচালককে মারধর করা শুরু করে এবং গণপিটুনিতে গাড়িচালক মারা যান বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এই কাজটা কেউ দয়া করে করবেন না। কেউ ইচ্ছা করে মানুষকে মারে না বা ইচ্ছা করে ধাক্কা দেয় না। যদি অপরাধ করে আপনারা ধরেন, পুলিশে দিয়ে দেন, তার বিচার হবে। আমরা সড়ক আইনও করে দিয়েছি এটা বিচারের জন্য। ’ তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় কেউ রাস্তায় পড়ে গেলে গণপিটুনির ভয়ে গাড়িচালক গাড়ি না থামিয়ে আরেকবার তার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেছে। না গেলে হয়তো সে বেঁচেও যেতে পারত। ’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই ভীতিটা থেকে ড্রাইভারকে মুক্ত করতে হবে। এটা জনগণের দায়িত্ব। ’