রাজধানী ঢাকায় বিএনপির আগামীকাল শনিবারের বিভাগীয় গণসমাবেশ ঘিরে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুপুরের পর থেকে ঢাকার অভ্যন্তরে গণপরিবহন চলাচলও ছিল সীমিত। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। বাস্তবে তা দেখা যাচ্ছে না।
ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে পুলিশের অতিরিক্ত তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় মহাসড়কে পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা বাসে তল্লাশি করছেন। ঢাকায় প্রবেশের পথে অনেক বাস আটকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে—এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। বিএনপির সমাবেশ ঘিরে রেল ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকবে কি না, এ ব্যাপারে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য বলছে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল থাকবে একেবারে সীমিত। গত বুধবার রাত থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরিবহন মালিকরা বলছেন, নিরাপত্তাঝুঁকি থাকায় তাঁরা বাস চালাতে রাজি নন।
ঢাকায় বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকবে : আগামীকাল ঢাকা শহর, শহরতলি ও আন্ত জেলা সড়কপথে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকবে বলে জানিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
গতকাল সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এমন তথ্য জানানো হয়। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতাদের এক যৌথ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। সভায় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সমিতির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ১০ ডিসেম্বর গাড়ি চলাচলে যাতে কোনো প্রকার বাধা না পড়ে, এ জন্য শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।
রেল-লঞ্চ চলাচল বন্ধে সিদ্ধান্ত হয়নি : সমাবেশের আগে এবং সমাবেশের দিন রেল ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকবে না বন্ধ থাকবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত রেল ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক ছিল। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী কালের কণ্ঠকে বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক আছে। ওপর থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না এলে কাল-পরশুও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকবে।
রেল চলাচল প্রসঙ্গে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিচালন) সরদার শাহাদাত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, রেল চলাচল স্বাভাবিক আছে। অন্য কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।
ঢাকার প্রবেশমুখে বাধা, তল্লাশিচৌকি : ঢাকার প্রবেশমুখ গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে চৌকি বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। পরিবহনের যাত্রীদের নামিয়ে এবং পথচারীদের দেহ ও সঙ্গে থাকা ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। সঙ্গে অতিরিক্ত টাকা থাকলে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। পুলিশের দাবি, হয়রানি নয়, নিরাপত্তার স্বার্থে এসব তল্লাশি চলছে।
দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আসা পরিবহন নবীনগর-চন্দ্রা সড়ক দিয়ে এবং বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার মানুষ টঙ্গী হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে। পুলিশ গাজীপুরের কালিয়াকৈর, চন্দ্রা ত্রিমোড় এবং শ্রীপুরের জৈনা বাজার এলাকায় তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে।
চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাঁচপুর, মদনপুর, মৌচাক এবং ঢাকা-সিলেট সংযোগের এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক ও নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়াসহ গুরুত্বপূর্ণ সাত জায়গায় তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ।
গতকাল সকাল থেকে এই তল্লাশি অভিযান চলছে। সন্দেহ হলে বা সুনির্দিষ্ট কাগজপত্র ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঢাকায় কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এ সময় পুলিশের বিশাল গাড়ির বহর নিয়ে কাঁচপুর হাইওয়েতে মহড়া দিতে দেখা গেছে।
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) হাবিবুর রহমান জানান, বিএনপির সমাবেশ ঘিরে কেউ যাতে সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড বা নাশকতা করতে না পারে, এ কারণে মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ সন্দেহভাজন বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছেন তাঁরা।
রাজধানীর আরেক প্রবেশমুখ মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের ভাষাশহীদ রফিক (ধল্লা) সেতু এলাকায় তল্লাশিচৌকি বসিয়েছে পুলিশ। ঢাকামুখী চলাচলকারী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় লাঠিসোঁটা নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অবস্থান ও মিছিল করতে দেখা যায়।
সিঙ্গাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন সারা দেশে নাশকতার পরিকল্পনা করছে। তাদের আগুন সন্ত্রাস মোকাবেলা করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে মহড়া দিচ্ছি। ’
(সংবাদে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রতিনিধিরা তথ্য দিয়েছেন। )