দীর্ঘ সতের দিন চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমান বন্দরে কার্গো খালাস বন্ধ রাখার পর গেল সোমবার চালু করা হয়। তিনদিনে প্রবাসীদের ৩২ টি কন্সাইনমেন্ট খালাস করার পর আবারো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে শাহ বিমান বন্দরে কার্গো পণ্য খালাস।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সব ধরনের কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষ হলেও বৃহস্পতিবার থেকে কোন কার্গো পণ্য খালাস করা হয় নি। বিমানবন্দর সুত্রে জানা যায়, সব ধরনের যাচাই বাছাই সম্পন্ন হওয়া কার্গো পণ্য খালাস করার নির্দেশনা থাকলেও বিমানবন্দরের দায়িত্বে থাকা কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মাসুদ হাসান অজ্ঞাত কারণে কার্গো খালাস বন্ধ রেখেছেন।
সুত্রমতে, সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের ঘুষ বাণিজ্যের দফারফা না হবার কারণে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে কার্গো পণ্য খালাস। এরআগে চল্লিশ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ উঠে দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে কার্গো পণ্য খালাস চালু করা হয়। তবে সেটিকে আইওয়াশ বলছেন ভুক্তভোগী প্রবাসীরা।
এ বিষয়ে জানতে বেশ কয়েক দফা মুঠোফোনে ফোন করে সাড়া মেলেনি ডেপুটি কমিশনার মাসুদ হাসানের। এসএমএস পাঠালেও কোন সাড়া দেননি তিনি।
চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরের কয়েকজন সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায় ডিসি কাস্টমস কোন পণ্য খালাস করা হবে না বলে তাদের জানিয়ে দিয়েছেন। রবিবার বিকেলে এ কথা জানানোর পর সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়েন ডেপুটি কমিশনার।
সুত্রমতে, বিদেশ ফেরত যাত্রীর ৭২ টি পাসপোর্টের ইমিগ্রেশন যাচাই রিপোর্ট দিয়েছিলেন বিমানবন্দর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। পণ্য ছাড় নেবার জন্য ‘এ’ ফরম জমা দেয়া হয়েছে অনেক যাত্রীর ব্যাগেজের বিপরীতে। যাবতীয় যাচাই বাছাই সম্পন্ন হবার পরও পণ্য খালাস বন্ধ করে দেয় কতৃপক্ষ। এ বিষয়ে জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের যোগাযোগ করা হলে জানা যায় বিমানবন্দরে কার্গো খালাস বন্ধ রাখার কোন নির্দেশনা দেয়া হয় নি।
জানতে চাইলে ভুক্তভোগী প্রবাসী আহমেদ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে অপেক্ষায় রাখা হয়েছে। দিবো দিচ্ছি বলে। কিন্তু তিনদিন টিমেতালে কাজ করার পর ডেপুটি কমিশনার নাকি নিজের ইচ্ছায় আবারও কার্গো খালাস বন্ধ করে দিয়েছেন। বিদেশ থেকে দেশে এসে এমন ভোগান্তির কথা বলে বোঝানো যাবে না। ‘
সরেজমিনে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, কার্গো পণ্য খালাস করতে অপেক্ষায় রয়েছেন বেশকিছু সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী। তাদের সাথে প্রবাসীদের কয়েকজনকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কোন কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হন নি।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে প্রতি সপ্তাহে একটি কার্গো ফ্লাইট অবতরণ করতো। বিমানবন্দর কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে কার্গো ফ্লাইট আসা বন্ধ রয়েছে এক মাস যাবত। ওয়ারহাউজে কার্গো পণ্যের জন্য জাযগা না থাকার অজুহাতে বন্ধ রয়েছে কার্গো ফ্লাইট। একারণে সরকার অন্তত চল্লিশ লাখ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা যাত্রীরা দেশে ফেরার সময় ব্যাগেজ রুলের অতিরিক্ত পণ্য কার্গো পাঠিয়ে থাকেন। জানা যায়, কার্গো ফ্লাইটে আসা পণ্যের আশি শতাংশই প্রবাসীদের। তাদের পক্ষে সিএন্ডএফ এসব পণ্য ছাড় করিয়ে থাকে। কিন্তু সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং ঘুষ বাণিজ্যের কারণে দীর্ঘ একমাস ধরে কার্যত অচল রয়েছে কার্গো পণ্য খালাস।