ডলার সংকটের কারণে চাপে রয়েছে দেশের অর্থনীতি। তবে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ডলারে অবৈধভাবে তেল, বিদেশি সিগারেট ও মদ কেনাবেচা চলছে বহির্নোঙর বঙ্গোপসাগরে। বিদেশি জাহাজ থেকে ডলারের বিনিময়ে অবৈধ পণ্য কিনে তা নিয়ে আসা হয় বন্দরনগরে। শুল্ক্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাচালানের মাধ্যমে কেনা পণ্য চড়া দামে বিক্রি করে রিয়াজউদ্দিন বাজারসহ নগরের খোলা বাজারে। অনেক পণ্য আবার সংকটের সময় গুদামজাত করে বিক্রি করা হয়। বহির্নোঙরে এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। যারা ডলারের বিনিময়ে সাগরে চোরাচালান করে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে বঙ্গোপসাগরের এ সেক্টরে অ্যাঙ্করেজ এলাকায় সর্বশেষ গত ১২ নভেম্বর এমন চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে। ওই চক্রের মূলহোতা রবিউল ইসলাম সোহাগ। সাগরে থাকা বিদেশি জাহাজ থেকে অবৈধভাবে মালামাল ক্রয়-বিক্রয়ের সময় একটি স্পিডবোট তল্লাশি করে ১৩টি ১০০ ইউএস ডলার, ১টি ৫০ ডলার, ৫ কার্টুন ১ হাজার শলাকা সিগারেট, ১৬টি জারিজেনে থাকা ৬৪০ লিটার ডিজেল জব্দ করে কোস্টগার্ড। এভাবেই সাগরে ডলারের বিনিময়ে তেল, সিগারেট, মদ ক্রয়-বিক্রয় চলছে।
কোস্টগার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি জানান, বহির্নোঙরে অবস্থানরত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজগুলোর প্রয়োজনীয় রসদ চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত এজেন্সি থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া রসদ, গ্যাস সিলিন্ডার, অবৈধ মোবাইল সিম কার্ড ও অন্যান্য পণ্য শুল্ক্ক ফাঁকি দিয়ে জাহাজে পাচার করে আসছে।
চট্টগ্রাম সদরঘাট নৌ থানার ওসি একরাম উল্লাহ বলেন, বন্দরকেন্দ্রিক কর্ণফুলী নদী ও সাগরের মোহনা এলাকায় অবৈধ চোরাচালানের ঘটনায় প্রতিবছর থানায় ৪০টির মতো মামলা রেকর্ড হচ্ছে। নদী ও সাগরে অনেক রকমের চোরাচালানের ঘটনা ঘটছে। ডলারের মাধ্যমে সাগরে বিদেশি জাহাজ থেকে অবৈধভাবে পণ্যের কেনাবেচা হচ্ছে।
সাগরে যেভাবে চলে চোরাচালান :সাগরে বিদেশি জাহাজ থেকে কম মূল্যে ডিজেল, কালো তেল, পাম অয়েল, বিদেশি সিগারেট ও মদ কিনতে পাওয়া যায়। ডলারের মাধ্যমে বিদেশিদের কাছ থেকে এসব পণ্য কিনে তা স্পিডবোট, লাইটার জাহাজ, বালুবাহী ট্রলারে করে বন্দরনগরে নিয়ে আসেন চোরাকারবারিরা। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বহির্নোঙরে থাকা তেলবাহী মাদার ভেসেল থেকে কর্ণফুলী নদী দিয়ে বালুবাহী বার্জ দিয়ে অপরিশোধিত ভোজ্যতেল চোরাচালান করতে গিয়ে ধরা পড়ে একটি বড় চক্র। সাগর থেকে অবৈধ পণ্য নিয়ে ফেরার পথে ১১ হাজার লিটার তেলসহ পতেঙ্গা উত্তর লালদিয়ার চর এলাকা থেকে এমভি তানিশা নামে একটি লাইটার জাহাজ জব্দ করে নৌ পুলিশ।
এ ঘটনায় ১২ জনকে আটক ও এসআই মিঠুন বালা বাদী হয়ে চোরাচালানকারী হারুনসহ ১৪ জনের নামে মামলা করেন। এ ছাড়া গত ২৬ সেপ্টেম্বর পতেঙ্গার সৈকত এলাকায় চোরাই তেলসহ তারেক নামে এক পাচারকারীকে আটক করে কোস্টগার্ড। তার থেকে ২ হাজার ২৪০ লিটার ডিজেল ও ১ হাজার ১২০ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়। ২৩ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর মোহনা থেকে ১৩ হাজার লিটার তেলসহ একটি লাইটার জাহাজ আটক করে কোস্টগার্ড। কর্ণফুলীর ১৫ নম্বর ঘাট তীর থেকে ৩৮টি বিদেশি মদের বোতলসহ আলাউদ্দিন নামে এক চোরাচালানকারীকে গ্রেপ্তার করে।
সাগরে অবৈধ বাণিজ্য সিন্ডিকেটে যারা : সাগরে চোরাচালানে জড়িত সিন্ডিকেটের মধ্যে নগরের সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার হারুন, পতেঙ্গার বার্মা ইউসুফ, নতুন ব্রিজের নুরু, সিসা হারুন, বেনসন নাছির, ইপিজেড রশিদ বিল্ডিং আকমল আলী রোডের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম সোহাগ, শিকলবাহার নুরুচ্ছফা, মাঝিরঘাটের আমির সাগরে চোরাচালানে সরাসরি জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে চোরাচালানের একাধিক মামলাও রয়েছে। এ ছাড়া সাগরে চোরাচালান চক্রে জড়িত আছে- নগরের সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার আবদুল্লাহ খান, মনজু, কর্ণফুলীর শুক্কুর, বদরপুরার নুর বক্স, আইয়ুব, বড়পোলের মাহবুব, মনসুর, নতুন ব্রিজের আনছার হাজী, মাঝিরঘাটের কাদের, বাংলা বাজারের রফিক, বিশু, সিরাজ, চরপাথরঘাটার খোরশেদ, আলী, শিকলবাহার রফিক, ইপিজেড রশিদ বিল্ডিং এলাকার আলী হোসেন, জাকির বেপারি, রাসেল উদ্দিন ও ইমন হাওলাদার। এরা নানা কৌশলে চোরাচালান করছে।