একটি সিঙ্গারা, একশো টাকার একটি নোট ও এক চুমুক কোল্ড ড্রিংকস এর জন্য জাতির কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম এমন ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে ভাবতে খুবই কষ্ট হয়। তরুণ প্রজন্মের এ পথে ঝুঁকে পড়ার কারণকে ছাত্র রাজনীতির সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়।ছাত্র রাজনীতি ও ক্ষমতালিপ্সার রাজনীতি এক নয়। ক্ষমতার প্রতি সবারই কমবেশি লিপ্সা রয়েছে। কেউ সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ করেন, আবার কেউ করতে ব্যর্থ হন। আমাদের দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে যে ক্ষমতা সবচেয়ে হাতের নিকটে তা হলো রাজনৈতিক নেতার বা দলের ছায়াতলে থেকে সিঙারা, কোল্ড ড্রিংকস দলের পাতি নেতার হওয়ার ক্ষমতা। এসমস্ত নেতাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে – রাজনৈতিক পরিচয় প্রচার করে সাধারণ জনগণকে হেনস্তা করা, শিক্ষকদের মারধর করা এবং ইভটিজিং চর্চাকে বীরদর্পে প্রসার করা।
এই সমস্যার উৎপত্তির কারণ নির্দিষ্ট করা খুবই জটিল। কারণ একটি নির্দিষ্ট উৎস থেকে এই সমস্যার সৃষ্টি নয়, বরং পরিবার এবং সমাজের, সঠিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাব বৃহদাংশে দায়ী।
রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে অপরিপক্ক কিশোরদের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া রাজনৈতিক নেতারাও এই দায় এড়াতে পারেন না।
শিক্ষকজাতি হলেন মানুষ গড়ার কারিগর। মাতাপিতার পর শিক্ষকের স্থান, এমনটি বলার চাইতে শ্রেয় হবে যদি বলি, “মাতাপিতাও শিক্ষক, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাদানকারীও শিক্ষক, শিক্ষক পরিচয়ে কারো স্থান আগে বা পরে নয়।” যিনি শিক্ষাদান করেন তিনিই শিক্ষক, গুরু, পথপ্রদর্শক। সৃষ্টিকর্তা যেসব রহমতের উছিলায় বা মাধ্যমে আমাদের গড়ে তুলেন, পথ দেখান তার মধ্যে শুরুতেই আসবেন আমাদের শিক্ষকজাতি। আমরা মানুষেরা শিখেই বেড়ে উঠি, কাজ করি, জীবন ধারণ করি। সে শিক্ষাটা আসতে হয় আমাদের পূর্বে একই পথ হেঁটে যাওয়া অন্য কোনো এক অভিজ্ঞ ব্যাক্তি থেকে। সেই অভিজ্ঞ ব্যাক্তিই হলেন আমাদের শিক্ষক।
শিক্ষক জাতি আমাদের ভুল ত্রুটি হলে কঠোর হন, আমাদের অবাধ্যতার অন্ধত্ব থেকে বেরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। কিন্তু বড় দুঃখের বিষয়, আজ চিত্র ভিন্ন। শিক্ষকের প্রতি কোনো ভক্তি এই অবাধ্য কিশোর জাতির তো নেই ই, বরং শিক্ষকদের দিকে তেড়ে যেতে এদের বিবেকে বাধা দেয় না।
ছাত্রীদের ইভটিজিং সহ বিভিন্ন উশৃঙ্খল আচরণের অপরাধে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় আশুলিয়ার চিত্রশাইলের হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক উৎপল কুমার সরকার-কে স্কুলমাঠেই স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিলো স্কুলের এক দশম শ্রেনীর ছাত্র এবং অসময়ে কালো ক্ষমতার হাত পেয়ে যাওয়া, সিঙারা, কোল্ড্র ড্রিংকসের কাছে নিজের বিবেককে বিক্রি করে দেয়া পাতি নেতার দল। আজ শিকার উৎপল কুমার সরকার, আগে হয়েছিলেন অনেকে, হয়তো এর সমাধানে জনসাধারণ এগিয়ে না আসলে সামনে আক্রান্ত হবেন আরো অনেকে।
এসবের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়ানোর ডাক ফেসবুক পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনা, করতে আমাদের সাহস হয় না। অনেকে আবার শিক্ষকের হাতে ফের বেত তুলে দেয়ার বোকা পরামর্শ দেন। বেত ও দমননীতি কোনো সমাধান নয়। বেত হাতে শিক্ষক ও স্ট্যাম্প হাতে উশৃঙ্খল শিক্ষার্থী একই পশু। যদি আমাদের যার যার পরিবার থেকে, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সূচনালগ্ন থেকে কিশোর-তরুণদের অঙ্কুরেই বিষমুক্ত করে সঠিক ও নৈতিক শিক্ষা প্রদান করা যায় তাহলে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রতিকার মিলবে। প্রতিরোধের আশা করা বোকামি, প্রতিরোধের ঠিকাদারি যারা নিয়েছেন তারা ই এই ভাইরাস প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন।