তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনোভাবেই নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে আবারও হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, ক্ষমতাসীনদের এখনই পদত্যাগ করতে হবে। গতকাল ফরিদপুরে দলীয় সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমি ক্ষমতা ছাড়ব না। তোমরা যে যাই বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই-এটা আর হবে না। এটা আর হবে না।
বিএনপির আগের কয়েকটি বিভাগীয় সমাবেশের মতো এটিও বাসসহ দূরপাল্লার যান বন্ধের কারণে আলোচনায় ছিল। সমাবেশের আগের দিন থেকেই ফরিদপুর শহরের অদূরে কোমরপুর আবদুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে দূর দূরান্ত থেকে আসতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। শুক্রবার রাতেই ভিড় বেড়ে মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়, খাওয়া দাওয়াসহ গল্পে পুরো এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ।
গতকাল বেলা আড়াইটায় সমাবেশের প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথি মঞ্চে আসলেও নেতাদের বক্তব্য দেওয়া শুরু হয় সকাল ১১টা থেকেই। এর আগেই সমাবেশের মাঠ কানায় কানায় ভরে ওঠে। সমাবেশে ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এদেশের মানুষের মনের দাবি। কারণ বিগত দুইটা নির্বাচনে আপনারা মানুষকে প্রবঞ্চনা করে, মিথ্যা কথা বলে, আপনারা ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন-নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছেন। কিন্তু এবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। খবর বিডিনিউজের।
দলের দাবি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা চাই, এই মুহূর্তে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দিতে হবে। জাতীয় সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে সেই সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ করার কথা বলেন তিনি। আমরা নতুন করে বিচার বিভাগকে সাজাতে চাই ন্যায় বিচারের স্বার্থে; আমরা নতুন করে প্রশাসনকে সাজাতে চাই সুশাসনের স্বার্থে, আমরা দুর্নীতি বন্ধ করতে চাই।
বক্তব্যের শুরুতে ফখরুল বৃহত্তর ফরিদপুরের প্রয়াত রাজনীতিক হাজী শরীয়তুল্লাহ, মুহাম্মদ মুহসীনউদ্দীন দুদু মিয়া, শেখ মুজিবুর রহমান, কে এম ওবায়দুর রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের নাম উল্লেখ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ঘোড়াও হাসবে : ফখরুল বলেন, গতকাল (শুক্রবার) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব ওই যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটা মহাসমাবেশ করছে না যুবলীগের নামে…ওখানে উনি বলেছেন, আওয়ামী লীগ নাকি সংগ্রাম করছে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য। এই কথা শুনলে ঘোড়াও হাসবে। আর বলবে ভূতের মুখে রাম রাম। যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিল, যারা গণতন্ত্রকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলল, যাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে যে কোনো মানুষ ভোট দিতে পারবে না, জোর করে ভোট দেবে; তাদের গণতন্ত্রের মানে হচ্ছে গুম করা, খুন করা, হত্যা করা, বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া। তারা বলে তারা নাকি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে!
বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, আজকে ফরিদপুরের এ জনসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য, নস্যাৎ করার জন্য তিন দিন আগে থেকে তাদের আজ্ঞাবহ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন, মালিক ইউনিয়ন দিয়ে পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। পথে পথে সিকিউরিটি চেক বসিয়েছে। আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা আটকায়। জিজ্ঞাসা করে কোথায় যাবেন। বলে, ‘যাওয়া যাবে না, রাস্তা বন্ধ আছে’। ‘এত ভয় কেন’? প্রশ্ন রেখে তিনি নিজেই উত্তরে বলেন, জনগণ থেকে তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছ। জনগণের সাথে তোমাদের কোনো সম্পর্ক নাই।
মুক্ত বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘ভয়’ পায় বলেই বর্তমান সরকার তাকে জামিন তো নয়ই, বিদেশে চিকিৎসার জন্যও যেতে দিচ্ছে না বলে তার অভিযোগ।
মাফিয়াদেরও জামিন হয়, মুক্তি পায় : মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে তোমরা ক্যাসিনো সম্রাটকে জামিন দিয়ে মুক্ত করে দাও। সে এখন যুবলীগে মহাসমাবেশে সামনের সারিতে শেখ হাসিনার সাথে বসে থাকে। কী দেশ আমাদের! যারা লুট করে, যারা মাফিয়া হিসেবে কাজ করে, যারা এদেশের সব কিছু ধ্বংস করে দেয়, তাদের জামিন হয়, তারা মুক্তি পায়। অথচ গণতন্ত্রের জন্য যিনি ৯ বছর সংগ্রাম করলেন এবং যিনি জীবনের ৩৫টি বছর গণতন্ত্রের জন্য কাজ করেছেন, তাকে তোমরা আটকিয়ে রেখে দাও। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাকে কতগুলো মিথ্যা মামলায় সাজিয়ে-গুছিয়ে তাকে সাজা দিয়ে বসে আছে। আরে ওই সাজা কি টিকবে? টিকে কখনও? মিথ্যা মামলায় সাজা টিকে না কখনও। সরকার ফের ‘অতীতের মতো মিথ্যা মামলা’ দায়েরের কৌশল নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ক্ষমতাসীনদের ‘আচরণ’ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের আরও অভিযোগ, ওরা মনে করে দেশটা তাদেরই বাপের দেশ; তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। এখানে সাধারণ মানুষ আমরা সব চাকর-বাকর, ক্রীতদাস আর কি। আমাদেরকে যেমন খুশি ব্যবহার করা যাবে। ফের বিচারবহির্ভূত ‘হত্যাকাণ্ড’ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি।
খাজাঞ্চিখানায় টাকা নাই : মির্জা ফখরুলের দাবি, খাজাঞ্চিখানায় তো টাকা নাই, টাকা শেষ। এজন্য বলছেন যে আর বাড়ানো হবে না ওই দুঃস্থ মহিলাদের তালিকা। কোথাও তাদের টাকা নাই। রিজার্ভে টাকা নেই। সব খেয়ে ফেলেছে। বড় বড় গলায় বলছে, একজন বললেন, আমরা কি টাকা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছি। আমরা বললাম যে, আপনারা টাকা চিবিয়ে খাননি। আপনারা রিজার্ভের টাকা গিলে খেয়ে ফেলেছেন।
ফরিদপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এ এফ এম কাইয়ুম জঙ্গীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ নেতৃবৃন্দ।
এদিকে গতকাল সকাল ১০টা থেকে ফরিদপুর জেলায় মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটেছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন।