ঢাকারবিবার, ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দ্যা পলিটিকা – রাজনীতির ভেতর রাজনীতি। – মুহাম্মদ ইশাত

মুহাম্মদ ইশাত মান্নান | সিটিজি পোস্ট
নভেম্বর ১১, ২০২২ ৫:১৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

গ্রিক শব্দ পলিটিকা থেকে পলিটিক্স বাংলায় বা উপমহাদেশের ভাষাগুলোতে যাকে বলা হয় রাজনীতি।

কিন্তু পলিটিকা শব্দের অর্থ শহরের বিষয়াবলি। শহর কেন্দ্রিক বিভিন্ন বিষয় নিয়েই মূলত রাজনীতি।

প্রবাদ আছে রাজনীতি মানে ক্ষমতা। আর ক্ষমতা পাওয়ার চাওয়া পাওয়া মানবের আদিম নেশা।

এই ক্ষমতা অর্জন এবং তা প্রয়োগ করার জন্য প্রয়োজন হয় একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার। আর একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা হচ্ছে এমন একটি কাঠামো, যা একটি সমাজের কাছে গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক পদ্ধতিকে নির্দেশ করে। যেহেতু বললাম আদিম নেশা তাই রাজনৈতিক চিন্তাধারার স্রোত কিন্তু কমবেশি প্রাচীন যুগ থেকেই চলে আসছে। তাই এর ইতিহাসটাও বেশ দীর্ঘ ও প্রাচীন। প্লেটোর ‘রিপাবলিক’ এবং অ্যারিস্টটলের ‘পলিটিকস’ এবং কনফুসিয়াস কর্মযজ্ঞ আমাদের রাজনীতির আগামাথা চিনিয়ে দেয়।

 

যাক এবার আসি দেশের কথায় অর্থাৎ বাংলাদেশের কথায়। বাংলাদেশের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে কোনো এলাকা নেই, যেখানকার মানুষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নেই বা রাজনীতির খোঁজখবর রাখে না এমনকি যাঁরা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন তাঁরাও সরাসরি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে থাকেন।

 

বাংলাদেশে মুলত দলকেন্দ্রিক রাজনীতি চলে। দলীয় রাজনীতিতে রাজনীতির ধারা দুইভাবে প্রবাহিত—আন্তর্দলীয় ও অভ্যন্তরীণ। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আন্তর্দলীয় রাজনীতি থাকবেই। কৌশলগত কারণেই এটি হয়ে থাকে বা করতে হয়। রাজনৈতিকভাবে দলকে শীর্ষ অবস্থানে নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এটি থাকতেই হবে। এ ক্ষেত্রে যে দল যত সময়োপযোগী রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারবে সে দল রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ততই লাভবান হবে। রাজনীতিতে এটি দোষের কিছু নয়। তবে দলীয় কর্মকাণ্ড বা নেতাকর্মীদের আচার-আচরণ যেন কোনোভাবেই শিষ্টাচারের বেড়াজাল ছিন্ন না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা আবশ্যক। সব কিছুই হবে রাজনৈতিক দলগুলোর সুন্দর সহাবস্থান পরিবেশের মধ্যে। একটি দলের কৌশল যাতে কোনোক্রমেই অন্য দলের সম্মানকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, রাজনৈতিক পরিবেশ কলুষিত না করে।

 

দলের অভ্যন্তরীণ বিভাজন বা গ্রুপিং এবং অন্তঃকলহ একটি রাজনৈতিক দলের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর। অনেক সময় এটি এক ভয়াবহ রূপ গ্রহণ করে দলের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিতে পারে। বাংলাদেশে ছোট দল-বড় দল-নির্বিশেষে এমন অনেক উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে। এসবের পেছনে রয়েছে নেতৃত্বের বা কর্তৃত্বের লোভ। এই খেলা চলছে তৃণমূল রাজনৈতিক স্তর থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত। তবে যে দলের অভ্যন্তরে কঠোর শৃঙ্খলা রয়েছে অর্থাৎ দলীয় নিয়ম-নীতি যথাযথভাবে পালিত হয়, সে দলের রাজনীতিতে রাজনীতির খেলা এতটা খোলামেলা চলতে পারে না, অনেকটাই সীমিত থাকে।

দলের অভ্যন্তরের শৃঙ্খলা বা নেতৃত্বের প্রতি আস্থা সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পাওয়া যায় ইদানীং হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন কাউন্সিল বা জেলা পরিষদের নির্বাচন থেকে। জাতীয় নির্বাচনেও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ভঙ্গের শাস্তি হয়েছে কি না তা রাজনৈতিক দলগুলোই বলতে পারবে। একটি দলের নেতা ও কর্মী যে-ই হোক না কেন, যদি দলীয় আদর্শ থেকে বিচ্যুতি ঘটে, তার সেই দলে থাকার কোনো অর্থ হয় না। বরং এতে দলই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে প্রার্থী নির্বাচন যাতে সঠিকভাবে হয়, যোগ্য ব্যক্তিই যাতে দলের মনোনয়ন পান সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।

 

একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে হয় আর তা হলো অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে রাজনীতির খেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হন তৃণমূল আর মধ্যপর্যায়ের কর্মী বা নেতারা। চট্টগ্রাম বলুন কিংবা ঢাকা বা কোনো মফস্বলে আমরা প্রায় কিন্তু দেখি, একই দলের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি ও গোলাগুলি। দু-একজন মারা যায়, বেশ কয়েকজন আহত হয়। মামলা আর পুলিশের ধরপাকড় চলে। কর্মীরা গাঢাকা দিতে বাধ্য হয়। নেতারা কিন্তু বহাল তবিয়তে থাকেন। এ ক্ষেত্রেও দলীয় গ্রুপিং কাজ করছে। সবাই যদি একই রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী হয়ে থাকবেন, তাহলে তো এমনটি হওয়ার কথা নয়। এখানে আদর্শ নয়, নেতৃত্ব, প্রতিপত্তি আর প্রভাব বিস্তারের জন্য চলে এসব খেলা। এসব বিষয় কারো অজানা নয়। অথচ এভাবেই চলছে রাজনীতির চাকা।

 

একটা বিষয় মনে পড়লো এটা বলেই লেখা শেষ করবো যখন নতুন নতুন রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছিলাম যদিও আমি রাজনীতির বিষয় নিয়ে এখনো অপরিপক্ক তবুও পরিবার ও আশপাশের বিভিন্ন মহলে থাকার কারণে মন্ত্রী এমপিদের অথবা সাবেক মন্ত্রী এমপিদের সাথে দেখা হতো। আমার সাথে পরিচিত বেশিরভাগ রাজনৈতিক আবার এখন বর্তমান বিরোধী দলে। যাইহোক এক নেতার সাথে দেখা করতে গেলাম। সাক্ষাৎকার নিবো এমন কিছু। তার জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করলাম। আমার পাশে ছিলো তার দলের এক ওয়ার্ড পর্যায়ের সাধারণ সম্পাদক বোধহয়। তার একান্ত সচিব তার পরিচয় জানতো তাই সে তাঁকে বললো ভাইয়া একটু অপেক্ষা করেন নেতা একটু পরে ডাকবেন। আমার সামনেই একজন একজন করে ঢুকে গেলো বের হয়ে গেলো কিন্তু সে লোক বসেই ছিলেন। তারপর প্রায় তিনঘন্টা পর নেতা যখন কোনো একটা প্রোগ্রামে যাবেন তখন তর ডাক আসলো। আমার সাক্ষাতকার ও ততক্ষণে শেষ। অফিস থেকে বের হয়ে তিনি সে নেতাকে বললেন কেমন আছো কুশলাদি জিজ্ঞেস করার পর তিনি তার সচিবকে ধমক দিয়ে বললেন। ও এসেছে এটা তাঁকে আগে বলা হয় নি কেন। এ বলে তিনি চলে গেলেন। সচিব চুপ করে থাকলো সে ও নেতার পিছে পিছে চলে গেলো। আমি কিন্তু জানি সচিব তাঁকে ঠিকই বলেছিলো কিন্তু তিনি ঐসময় তাকে ডাকাটা বোধহয় জরুরি বোধ করেন নি।

 

এখানে একটা বিষয় মজার আছে। কারন এখানেও রাজনীতি আছে। এখানে নেতা রাজনীতি করলেন তাঁর নিজ দলের কর্মীর সঙ্গে। এত কষ্ট করে এসে এত সময় নিয়ে আসা কর্মীর কথা শোনার সময় হলো না তাঁর দলেরই নেতার। আসলে ওই কর্মী ছিলেন নেতার বিরোধী গ্রুপের লোক। অর্থাৎ দলের ভেতর যে বিভাজন, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দল, ভেঙে যাচ্ছে নেতাদের ওপর কর্মীদের বিশ্বাস ও আস্থা। এবং সমগ্র দেশ বঞ্চিত হচ্ছে সঠিক দিকনির্দেশনা বা সেবা থেকে। আসলে রাজনীতিতে রাজনীতির খেলা অতীত থেকেই আছে কিন্তু বর্তমানে তার ব্যাপকতা যে বিশাল আকার ধারণ করেছে, তা দল দেশ এবং জনগনের জন্য মোটেও সুখকর নয় বরং সংকটের।