নগরীর খাতুনগঞ্জের চাঁন মিয়া গলিতে মো. মাসুদ (৪১) নামে এক শ্রমিককে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতের ঘটনায় দিনভর থমথমে ছিল খাতুনগঞ্জে। গত সোমবার সন্ধ্যার ঘটনার পর শ্রমিকেরা ৩ ঘণ্টা ধর্মঘটের পর কাজে ফিরে যান। তবে গতকাল সকালে মাসুদের অবস্থার অবনতি হওয়ার খবরে শ্রমিকেরা ফের ধর্মঘট করে পণ্য ওঠানামা বন্ধ রাখেন। এতে পুরো খাতুনগঞ্জ স্থবিরতা বিরাজ করে। পরে সন্ধ্যার দিকে চাক্তাই আড়তদার সাধারণ ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির নেতারা শ্রমিকদের আশ্বস্ত করলে তারা কাজে ফিরে যান।
গতকাল বিকালে খাতুনগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশে পণ্যভর্তি ট্রাক-কাভার্ডভ্যান অলস দাঁড়িয়ে আছে। ছিল না শ্রমিকদের চিরচেনা হাঁকডাক ও চিৎকার চেঁচামেচি। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় জটলা বেঁধে শ্রমিকদের বসে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া কয়েকটি পয়েন্টে ঠেলাগাড়ি উল্টে দিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন শ্রমিকেরা।
আবুল হোসেন নামে এক শ্রমিক বলেন, আমরা দিনে এনে দিনে খাই। এই খাতুনগঞ্জে মনে হয় রাস্তার একটি কুকুরের চেয়েও শ্রমিকের দাম কম। এর আগে বিভিন্ন সময় শ্রমিকেরা নির্যাতিত হয়েছে। আমরা কখনো নির্যাতনের বিচার পাইনি। এর ফলে আমাদের এক লোককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছে।
আবদুর রশিদ নামে আরেক শ্রমিক বলেন, আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কালকে আমার ওপরও সন্ত্রাসীরা হামলা করতে পারে। আগে তো নিজেকে বাঁচাতে হবে। দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, খাতুনগঞ্জে গত এক মাস ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য কমে গেছে। ক্রেতা নেই। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক ধর্মঘট। তবে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এ ঘটনায় ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশকে অনুরোধ করব, যাতে অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়। সারা দিন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে প্রচুর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। কোটি কোটি টাকার পণ্য ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানে পড়েছিল। যেহেতু বেচাকেনা বন্ধ ছিল, ব্যাংকিং লেনদেন সেই অর্থে বেশি হয়নি। ধর্মঘট তো কোনো সমাধান নয়। তাই আমি এবং আমাদের সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মিলে শ্রমিকদের বুঝিয়ে ধর্মঘট তুলে নেয়ার জন্য অনুরোধ করি। তারাও আমাদের অনুরোধে ধর্মঘট তুলে কাজে যোগ দেন।
জাতীয় শ্রমিক লীগ সিবিএ-নন সিবিএ সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব আবুল হোসেন আবু বলেন, খাতুনগঞ্জে শ্রমিকদের ধর্মঘট সন্ধ্যায় প্রত্যাহার করা হয়েছে। সমস্যা হয়েছে পিকআপের চালকের সাথে। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, শ্রমিকরা সব ধরনের পিকআপের পণ্য ওঠানামা বন্ধ রাখবে। আমি নিজেও আহত মাসুদের খোঁজখবর নিয়েছি। তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসকরা ৭২ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রেখেছেন।
এদিকে হামলার ঘটনায় পিকআপ চালক মোহাম্মদ রাসেল (২৩) ও আরো ৫-৭ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা করেছেন আহত শ্রমিক মাসুদের ছেলে মোহাম্মদ বাবুল (২১)।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা বলেন, একজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছে। হামলাকারীকে ধরতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে খাতুনগঞ্জের চাঁন মিয়া গলিতে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত হন শ্রমিক মাসুদ। পরে তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ২৭ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। গতকাল দুপুরে কয়েক দফা অস্ত্রোপচার শেষে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়।