আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW) জানিয়েছে, তুরিন আফরোজ তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন না এবং তার নামে কোনো ডক্টরেট ডিগ্রির রেকর্ড নেই।
এই তথ্য আদালতে উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার। তিনি রোববার (৪ মে) আপিল বিভাগে একটি বাড়ি সংক্রান্ত মামলায় শুনানির সময় এই বিষয়টি জানান।
ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও তার ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদের মধ্যে রাজধানীর উত্তরার একটি পাঁচতলা বাড়ির ভোগদখল ও মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলছে। এই বাড়িতে ২০০২ সাল থেকে বসবাস করে আসছিলেন তুরিন আফরোজের মা শামসুন্নাহার বেগম এবং ভাই শাহনেওয়াজ।
তবে অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে তুরিন আফরোজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার মা ও ভাইকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর উভয় পক্ষ আলাদা করে দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন এবং বিচারিক আদালত উভয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে ‘স্থিতাবস্থা’ আদেশ দেন।
এই আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে, ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মো. সেলিমের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থিতাবস্থা বাতিল করে রায় দেন। এর ফলে শামসুন্নাহার ও তার ছেলে শাহনেওয়াজের ওই বাড়িতে বসবাসে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আদালতে জমা দেওয়া নথি থেকে জানা যায়, তুরিন আফরোজ দীর্ঘদিন ধরেই নিজেকে ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিপ্রাপ্ত বলে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়, তাদের রেকর্ড অনুযায়ী তুরিন আফরোজ নামে কোনো শিক্ষার্থী সেখানে কখনও ভর্তি হননি বা পিএইচডি সম্পন্ন করেননি।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর আইনজীবী মহলে নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এর আগে ১৩ মার্চের শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, “তুরিন আফরোজ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে একসময় পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছিলেন। এক মুহূর্তে তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এখন তার মায়ের ওই বাড়িতে বসবাস নিশ্চিত করার জন্য আদালতের নির্দেশনা প্রার্থনা করছি।”
তুরিন আফরোজের দাবি, তার বাবা তসলিম উদ্দিন তাকে ওই বাড়ি হেবা (দান) করে দিয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে। তবে তার মা শামসুন্নাহার বেগম ও ভাই শাহনেওয়াজ আদালতে পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, কখনোই এমন হেবা হয়নি বরং ১৯৯৭ সালে শামসুন্নাহার তার ছেলে শাহনেওয়াজকে সম্পত্তি হেবা করে দেন। পরবর্তীতে সেই সম্পত্তির ওপর হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ভবন নির্মাণ করা হয়।
বর্তমানে সম্পত্তির ভোগদখল ও মালিকানা নিয়ে দায়ের করা দুটি দেওয়ানি মামলা বিচারিক আদালতে নিয়মিত বিচারাধীন রয়েছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী, মামলাগুলো এখন স্বাভাবিকভাবে চলবে।