৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা এখন দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি। বন্দিদশায় ভিআইপি নেতাদের বিচিত্র আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে কারা কর্তৃপক্ষ।
কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক শিল্প-বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সেলে সেবকদের নিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন। মোবাইল ব্যবহারের চেষ্টাকালে ধরা পড়ায় সেলের ভেতর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সহবন্দি ড. আব্দুর রাজ্জাক ও ফারুক খান তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে সালমানকে অন্য কক্ষে সরানোর আবেদন করেন। এছাড়া সালমান এফ রহমান সেলে টেলিভিশন স্থাপনের আবেদন করলেও কারা কর্তৃপক্ষ তা নাকচ করে দেয়।
সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান আদালতে যাতায়াতের সময় পুলিশের ওপর চড়াও হন। তিনি হ্যান্ডক্যাপ পরতে অস্বীকার করেন এবং পুলিশের উদ্দেশ্যে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন। কথায় কথায় ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালিগালাজ করেন বলেও জানা গেছে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও প্রায়ই গালিগালাজে জড়িয়ে পড়েন।
কারাগারে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কারারক্ষীরা জানিয়েছেন, তিনি প্রায় সময় সেলের ভেতর নির্জনে বসে কান্নাকাটি করেন।
অপরদিকে সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক সেলে গান গেয়ে সময় কাটান। আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় তিনি মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।
ভিন্ন রকম জীবন যাপন করছেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার স্ত্রী নিয়মিত বই পাঠান, এবং মামুন দিনের বেশিরভাগ সময় বই পড়েই কাটান।
বরখাস্ত হওয়া সাবেক ডিসি মশিউর রহমান সাধারণ হাজতিদের সঙ্গে থেকে তাদের ইংরেজি শেখানোর কাজ করছেন।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) জান্নাত-উল-ফরহাদ জানান, “সারা দেশের কারাগারে বর্তমানে ১৪৫ জন ভিআইপি বন্দি আছেন। কারা বিধিমালার আলোকে ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের নির্ধারিত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত কোনো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না।”
কারা সূত্র জানায়, শুরুর দিকে কিছুটা চনমনে থাকলেও দিন যত গড়াচ্ছে, ততই ভিআইপি বন্দিদের মধ্যে বিষণ্ণতা বাড়ছে। কারাগারে উন্নত খাবার ও মোবাইল ব্যবহারের চেষ্টাও কিছু বন্দির মধ্যে দেখা গেছে, যা নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের পৃথক সেলের ব্যবস্থা থাকলেও সেলের মধ্যে একাকীত্বের কারণে অধিকাংশ ভিআইপি বন্দির মানসিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে জানা গেছে।