ঢাকাসোমবার, ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আনোয়ারায় পাউবোর প্রকল্পে চাঁদা ও মাল সরবরাহ নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, নিখোঁজ ২

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
এপ্রিল ২১, ২০২৫ ৮:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৪৯ কোটি টাকার ব্লক স্থাপন প্রকল্পে মালামাল সরবরাহ ও চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন, নিখোঁজ রয়েছেন ২ জন।

রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার সিউফ এল পাড়ি ও রাত দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় এসব ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, ঠিকাদার জাহিদ ইকবালের অধীনে কাজ শুরু হলে ‘আল-হাসান ট্রেডিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান ইট, বালু ও কংকর সরবরাহ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক আনোয়ারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হাসান ওরফে হাসান চেয়ারম্যান। এদিকে, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ ফোরকান, সাদেক ও নুরুল কবির রানা দাবি করেন, প্রকল্প এলাকায় কাজ চালাতে হলে তাদের চাঁদা দিতে হবে। সরবরাহকারী পক্ষ রাজি না হলে তারা কাজ বন্ধ করে দেন।

রোববার দুপুরে কাজ শেষে ফেরার পথে হাসান চেয়ারম্যানের অনুসারীদের ওপর হামলা চালায় হেলালপন্থীরা। আহতদের মধ্যে ছিলেন আব্দুল গফুর, শাহজাহান, জব্বার, গিয়াসউদ্দিনসহ অন্তত ১১ জন। তাদের কাছ থেকে নগদ ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে, ভাঙচুর করা হয় ব্যক্তিগত গাড়িও।

ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে রাত দেড়টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় দ্বিতীয় দফায় তাদের ওপর হামলা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে ইট-পাটকেল ছোড়া ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। ভাঙচুর হয় তিনটি মোটরসাইকেল, একটি প্রাইভেটকার এবং একটি পুলিশ গাড়ি। আহত হন তিন পুলিশ সদস্যসহ আরও কয়েকজন।

এই সময় ইলিয়াস, মোতালেব ও সুজন নামের তিনজনকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে মোতালেবকে আহত অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয় এবং সুজনকে একটি দোনলা বন্দুকসহ পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ইলিয়াস এখনো নিখোঁজ।

হাসান চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, “আমরা থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। ফেরার পথে পুলিশের সামনেই আমাদের ওপর হামলা হয়। আমাদের তিনজনকে তুলে নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, হামলাকারীদের নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল কবির রানা, গাজী ফোরকান, জিয়াউর কাদের জিয়া, মোহাম্মদ সাদেক, জাবেদ, মোহাম্মদ রাশেদ, এরশাদ, নুর শাহেদ খান রিপন, মো. রফিক ও মঈন উদ্দিন।

এ বিষয়ে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব লায়ন হেলাল উদ্দিন বলেন, হাসান চেয়ারম্যান অনুসারীরা আওয়ামী লীগের লোক নিয়ে আনোয়ারা উপজেলায় ভীতিকর মিছিল দিতে থাকে। অস্ত্র নিয়ে মিছিল করার ভিডিও লাইভে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রাতে বিএনপির লোকজন তাদের প্রতিরোধ করে। একজনকে অস্ত্রসহ পুলিশে সোপর্দ করা হয়। উপকূলী এলাকায় আমাদের এক বিএনপি নেতার জায়গা দখল করা নিয়ে এর আগে অনেক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের লোকজন নিয়ে চলাফেরা করছে। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রে অবহিত করব।

আহতদের মধ্যে রয়েছেন—আব্দুল গফুর, শাহজাহান, জব্বার, গিয়াসউদ্দিন, মোতালেব, আশফাকুল হাসান চৌধুরী (চেয়ারম্যানপুত্র), এমদাদ হোসেন, মোহাম্মদ রাশেদ, মোহাম্মদ হেলাল, আব্দুর রশিদ ও আবুল কাশেম। সবাইকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আনোয়ারা থানার ওসি মো. মনির হোসেন বলেন, “বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে ঘটনা ঘটেছে। অস্ত্রসহ একজনকে পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”