ঢাকাবুধবার, ২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

পাহাড়ি ছড়া শুকিয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত, পানির তীব্র সংকট

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ২৩, ২০২৫ ৭:২২ অপরাহ্ণ
Link Copied!

রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি অঞ্চলে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পাহাড়ি ছড়াগুলোতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। গোসল, কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে খাওয়ার পানির জন্যও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। অনেককে দূরদূরান্ত থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে, যা তাদের জীবনকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কাপ্তাইয়ের চিৎমরম ছড়া, ওয়াগ্গাছড়া, পাগলীপাড়া ছড়াসহ বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়ায় এখন পানির কোনো প্রবাহ নেই। বর্ষায় যেসব ছড়া পানিতে উপচে পড়ত, সেগুলো এখন সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পাহাড়ি ছড়ার পানির ওপর তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নির্ভরশীল। কিন্তু ছড়াগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় তারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

ওয়াগ্গা ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দা সমিরণ তঞ্চঙ্গ্যা ও শানু তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘আমরা ছড়ার পানি দিয়ে গোসল, কাপড় ধোয়া থেকে শুরু করে সব কাজ করি। কিন্তু এখন ছড়াগুলো শুকিয়ে গেছে। দূর থেকে পানি আনতে হচ্ছে, যা খুব কষ্টকর।’

রামছড়ার বাসিন্দা সুমেল মারমা ও উমেচিং মারমা জানান, ‘ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় পানির জন্য ভীষণ কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। ঝিরিতে গিয়ে মাটি খুঁড়ে পানি সংগ্রহ করতে হয়। খাওয়ার পানির জন্য সবচেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে।’

চিৎমরম ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার বাসিন্দা মাচিংনু মারমা ও সুইহ্লাচিং মারমা বলেন, ‘পাহাড়ের ওপর বসবাসকারীদের জন্য ছড়াই একমাত্র পানির উৎস। ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় আমাদের কষ্টের সীমা নেই। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চাই।’

এ বিষয়ে ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিরঞ্জিত তনচংগ্যা বলেন, ‘জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ—এই তিন মাস পাহাড়ি ছড়াগুলো শুকিয়ে যায়। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঝরনা না থাকায় পানির প্রবাহ কমে যায়। সচ্ছল পরিবারগুলো গভীর নলকূপ বসিয়ে পানির সংকট মেটালেও গরিব মানুষেরা তা পারে না। বৃষ্টি শুরু হলে এই সমস্যা কমে আসবে।’

কাপ্তাই উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী লিমন চন্দ্র বর্মণ জানান, ‘নুনছড়ি মারমা পাড়ায় পানির সমস্যা দূর করতে জিএফএস প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এছাড়া দুর্গম এলাকায় রিং টিউবওয়েল বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি, এতে পানির সংকট কিছুটা কমবে।’

শুষ্ক মৌসুমে পানির এই সংকট কাপ্তাইয়ের পাহাড়ি জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা কামনা করেছেন। পানির এই সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পাহাড়ি জনজীবন আরও কঠিন হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।