ঢাকাশুক্রবার, ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের বক্তব্যে জামায়াতের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ১৪, ২০২৫ ১২:২৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ‘জামায়াত যুদ্ধাপরাধের সহযোগী ছিল’ মর্মে দেওয়া মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গত ১৩ মার্চ এক বিবৃতিতে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “মাহফুজ আলম গত ১২ মার্চ ফেসবুক স্ট্যাটাসে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধের সহযোগী বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আমি তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি জামায়াত সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে প্রতিবেশী দেশের গুপ্তচর শাহরিয়ার কবিরদের ভাষায় কথা বলেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “মাহফুজ আলমের মনে রাখা উচিত, তিনি একটি অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা। কোনো রাজনৈতিক দলকে টার্গেট করে সমালোচনা বা মিথ্যা বক্তব্য দেওয়ার তার কোনো নৈতিক বা আইনি অধিকার নেই। রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে চাইলে রাজনীতির ময়দানে নামা উচিত। তার এই বক্তব্য সরকারের অরাজনৈতিক চরিত্রকেই প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।”

জামায়াত নেতা আরও বলেন, “মাহফুজ আলমের জানা উচিত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত কমিশনে জামায়াতের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বঙ্গবন্ধু নিজেই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিয়েছিলেন এবং পাকিস্তানি সৈন্যদের ফেরত পাঠিয়েছিলেন। জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে নাগরিকত্ব ফিরে পেয়েছিলেন।”

তিনি শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা ও বিচার প্রক্রিয়ার সমালোচনা করে বলেন, “শেখ হাসিনা সরকার ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বসিয়ে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছিলেন। দলীয় লোকদের দিয়ে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে যে বিচার করা হয়েছে, তা দেশে-বিদেশে কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের নামে বিচারপতিদের ভয় দেখিয়ে যে প্রহসন করা হয়েছে, তার প্রমাণ স্কাইপ কেলেঙ্কারি, সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বক্তব্য এবং মাওলানা সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালীর স্বীকারোক্তি। ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্টেও এই বিচার গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।”

মিয়া গোলাম পরওয়ার দাবি করেন, “১৯৭১ সালে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের সহযোগী হওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। মাহফুজ আলমের বক্তব্য ভিত্তিহীন ও অসত্য। তার এই বক্তব্য কোনো রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্য বা অপশক্তির ইন্ধনে হতে পারে বলে দেশবাসী মনে করে।”

তিনি আরও বলেন, “জামায়াতে ইসলামী আহলে সুন্নাত আল জামায়াতের পূর্ণ অনুসারী। জামায়াতের আকিদা নিয়ে প্রশ্ন তোলা সম্পূর্ণ অবান্তর। জামায়াতে ইসলামী, ফরায়েজী জামায়াত, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এবং নেজামে ইসলামের সাথে ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের ২০২৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে আসছে।”

১৯৮৩ সালের ইত্তেহাদুল উম্মাহ গঠনের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, চরমোনাইর পীর মাওলানা ফজলুল করিম, খেলাফত মজলিসের নেতা আল্লামা আজিজুল হক, জমিয়তে ওলামা ইসলামের নেতা মাওলানা মহিউদ্দিন খান, নেজামে ইসলামের নেতা মাওলানা সিদ্দিক আহমেদ এবং চট্টগ্রামের বাইতুশ শরীফের পীর মাওলানা আবদুল জব্বারসহ দেশের শীর্ষ আলেমগণ মিলে ইত্তেহাদুল উম্মাহ গঠন করেছিলেন।”

মিয়া গোলাম পরওয়ার আশা প্রকাশ করেন, “আমাদের এই বক্তব্যের পর মাহফুজ আলমের মনের বিভ্রান্তি দূর হবে এবং তিনি তার ভিত্তিহীন ও মিথ্যা বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করবেন। ভবিষ্যতে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া থেকে তিনি বিরত থাকবেন।”

জামায়াত নেতার এই বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ঐতিহাসিক ভূমিকা এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর সাথে তাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি মাহফুজ আলমের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর বলে আখ্যায়িত করেছেন।