ঢাকারবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আ.লীগের রাজনৈতিক সংকট : মোদির সঙ্গে সম্পর্কের প্রভাব

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ২, ২০২৫ ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বর্তমানে রাজনৈতিক সংকটের মুখোমুখি, যা সম্প্রতি আরও গভীর হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময়, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানিয়ে প্ল্যাকার্ড বহন করেছেন, যা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠকের সময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা “ওয়েলকাম নরেন্দ্র মোদী” লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে উপস্থিত হয়ে বিতর্কের জন্ম দেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ঘটনাটি ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে, যেখানে আওয়ামী লীগের ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান ও হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতার প্রতি সমর্থনের বিষয়টি প্রশ্নের মুখে পড়ে।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এই ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেন, “প্রতিবাদ সমাবেশের সময় মোদিকে দেখে আমরা স্বাগত জানাই।” তবে তাঁর এই বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে আরও বিতর্ক তৈরি করে। বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের এমন পদক্ষেপ আদর্শিক দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ ধর্মনিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল মানবাধিকারভিত্তিক রাজনীতির জন্য পরিচিত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দলটির নীতিতে পরিবর্তনের প্রমাণ মিলছে। বিশেষ করে, মোদির মতো বিতর্কিত নেতার প্রতি সমর্থন এবং ভারত-মার্কিন কূটনৈতিক সম্পর্কে অংশগ্রহণ দলের ভেতরে ও বাইরে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে আওয়ামী লীগ ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলেও, এটি দলের ঐতিহ্যবাহী ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করছে। পাশাপাশি, বিজেপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে আদর্শিক পার্থক্য সত্ত্বেও উভয় দলের শাসনকালে ক্ষমতা কেন্দ্রীকরণ, বিরোধী দল দমন ও গণতান্ত্রিক মৌলিক নীতির অবনতির মিল লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের একাধিক অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি আওয়ামী লীগের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনারের অফিস (OHCHR) ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনকালে আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য দিকগুলো হলো:

১. বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও দমন-পীড়ন

নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের ওপর অত্যধিক বলপ্রয়োগ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও আওয়ামী লীগ সরকারের তদন্তে কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।

২. অবৈধ গ্রেফতার ও নির্যাতন

প্রতিবাদকারীদের বিচারবিহীন আটক ও নির্যাতনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনের চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের অনেকেই শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

৩. শিশু-নারীদের ওপর সহিংসতা

প্রায় ১৮০ শিশু হত্যা ও নারীদের যৌন সহিংসতার ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের ভূমিকা নিন্দিত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসায় বাধা ও চিকিৎসকদের হয়রানির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিশেষত, ফ্রিডম হাউস এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং অন্যান্য রক্ষণশীল আইনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অবকাঠামোকে সংকুচিত করেছে, যার ফলে নাগরিক সমাজের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়েছে।

আওয়ামী লীগের মোদির প্রতি সমর্থন সংখ্যালঘুদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে এবং এই উদ্বেগ বাড়তে থাকলে দেশে ধর্মীয় অস্থিরতার মতো ভয়াবহ সমস্যা দেখা দিতে পারে

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আওয়ামী লীগ যদি তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন না আনে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ না করে, তবে ভবিষ্যতে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরও দুর্বল হতে পারে। বিশেষত, আন্তর্জাতিক চাপ এবং দেশের অভ্যন্তরে জনগণের প্রতিবাদ তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে, নতুন সরকার গঠনের প্রাক্কালে এই ইস্যুগুলো আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের দেশের সর্বস্তরের মানুষের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক নীতির স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, যাতে সরকার ভবিষ্যতে জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে পারে