ভারতের বিখ্যাত আজমীর শরীফের নিচে মন্দির আছে এমন দাবি করে আদালতে পিটিশন দায়ের করেছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন হিন্দু সেনা। গত সেপ্টেম্বরে এই পিটিশন দায়ের করার পর আজমীরের একটি আদালত দাবিটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, উগ্রপন্থি হিন্দুদের দাবি, এই আজমীর শরীফকে ঘোষণা করতে হবে মন্দির হিসেবে। তারা আজমীর শরীফে আবারও পূজা করার অনুমতি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন।
মাত্র দুইদিন আগে উত্তরপ্রদেশের সামভালে মসজিদের নিচে মন্দির থাকার দাবি নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। সেখানে পুলিশ অন্তত তিন জন মুসলিমকে গুলি করে হত্যা করে। গ্রেফতার হয় ২০ জনেরও অধিক মুসলিম নাগরিক। সেই রেশ না কাটতেই এবার আজমীর শরীফকে নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিলো উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা।
আদালতে দায়ের করা পিটিশনে ১৯১১ সালে অবসরপ্রাপ্ত বিচারক হর্বিলাস সার্দার লেখা একটি বইয়ের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আজমীর শরীফের চারপাশে হিন্দু ধর্মের মৃৎশিল্প ও খোদাই রয়েছে। আজমীর শরীফ নিয়ে পিটিশন দায়ের করা উগ্রপন্থি সংঠন শিব সেনা দাবি করছে, আজমীর শরীফকে ‘সংকট মোচন মহাদেব’ মন্দির হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। যদি দরগার কোনো ধরনের রেজিস্ট্রেশন থাকে সেটি বাতিল করতে হবে। ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থাকে দিয়ে জরিপ করাতে হবে এবং হিন্দুদের সেখানে পূজা করার অধিকার দিতে হবে।
আজমীর শরিফ দরগাহ কমিটি এই দাবি অস্বীকার করেছে। তারা বলছে, এখানে আফগানিস্তান থেকে শুরু করে ইন্দোনেশিয়াসহ সব ধর্ম বর্ণের মানুষ আসেন। এখানে বহুতত্ববাদ প্রচার হয়। তবে আজমীর শরিফকে নিয়ে এমন দুরভিসন্ধি এবারই প্রথম নয়।
২০০৭ সালের ১১ অক্টোবর রমজান মাসে ইফতারের সময় আজমির দরগায় ভয়াবহ বোমা হামলা চালানো হয়। সে ঘটনায় তিনজন নিহত সহ আহত হন আরও ১৫ জন। ঐ হামলার প্রায় ১০ বছর পর দুই হিন্দুত্ববাদী হামলাকারীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত।
ইতিহাস বলছে, ১২৩৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের রাজস্থান রাজ্যে তৈরি করা হয় আজমীর শরিফ দরগাহ। পবিত্র স্থান হিসেবে সুপরিচিতি এবং আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর নিদর্শন থাকায় মুসলিমদের পাশাপাশি অনেক অমুসলিম লোক এখানে ভ্রমণ করেন। পবিত্র এই স্থান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির কারণে সাম্ভালের মত রাজস্থানেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।