জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে সশরীরে যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের সাধারণ আলোচনায় বরাবরের মতো এবারও বাংলা ভাষায় ১৯ তম ভাষণ দেবেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভাষণে বঙ্গবন্ধুকন্যা বিশ্ব নেতাদের যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনা ও শান্তির বার্তা, যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, খাদ্য নিরাপত্তা, জ্বালানি সংকট, রোহিঙ্গা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে গুরত্ব দেবেন।১৫ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রায় ১৫ দিনের সফরে লন্ডন হয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সদ্য প্রয়াত ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা করার কথা রয়েছে তার। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি সাধারণ পরিষদে বরাবরের মতো বাংলা ভাষায় ভাষণ দেবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্তকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর ১৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবস্থান করবেন, সেদিন রানি এলিজাবেথের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিউইয়র্ক যাবেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তিনি বাংলা ভাষায় ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি ওয়াশিংটন যাবেন, সেখানেও তার কিছু আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে।
নিউইয়র্কে ১৫ দিনব্যাপী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৭ তম অধিবেশনে শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর)। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর শুরু হবে অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের সাধারণ আলোচনা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা অংশ নেবেন। অধিবেশনের শেষ হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর।প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে কোন বিষয়গুলো গুরত্ব পাবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পুরো বিশ্ব কমবেশি বিভিন্ন ধরনের সংকট মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশ বরাবরই জাতিসংঘে শান্তির কথা বলে এসেছে। এবার বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী হয়তো যুদ্ধ না করে যে কোনো সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের বার্তা দেবেন। যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো যারা উন্নয়শীল দেশ থেকে উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার চেষ্টা করছে তারা যুদ্ধের কারণে কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, বিশেষ অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় সেসব বিষয় তুলে ধরবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
এ কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার কথা উঠে আসবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, খাদ্য নিরাপত্তা বা জ্বালানির মতো ইস্যুগুলোও উঠে আসতে পারে বক্তব্যে।
খাদ্য, জ্বালানি এবং অর্থায়ন বিষয়ে ‘চ্যাম্পিয়নস গ্রুপ অব গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স’ প্ল্যাটফর্মের সদস্যদের নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের সভাপতিত্বে একটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। প্ল্যাটফর্মটির গুরত্বপূর্ণ সসদ্য হিসেবে বৈঠকে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এন্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক একটি বৈঠকে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশের আয়োজনে একটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট এবং প্রত্যাবাসন শুরু না হওয়া এবং বর্তমানে মিয়ানমার সৃষ্ট কারণে সীমান্তে উদ্বেগ তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
এর বাইরে আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে আরেকটি সাইড ইভেন্টে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। ভূমিহীন-গৃহহীনদের কীভাবে সরকার সহায়তা করছে, সেটি তুলে ধরা হবে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নিয়ে ছবির প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
নিউইয়র্কে বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। কাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হচ্ছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, কয়েকটা দেশের রাষ্ট্র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। চূড়ান্ত করে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। কেননা, সিডিউলের পরিবর্তন হচ্ছে। তবে জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে একটা সাক্ষাৎ রয়েছে।
নিউইয়র্কের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আগামী ২৪ বা ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে যাওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দেন। আর তার সুযোগ্য উত্তরসূরি শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এ পর্যন্ত ১৮ বার ভাষণ দেন। এবার তিনি ১৯ তম ভাষণ দেবেন। জাতিসংঘের ৭৬ তম অধিবেশনেও সশরীরে যোগ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তবে করোনা মহামারি পরিস্থিতির কারণে ৭৫তম অধিবেশনে তিনি সশরীর যোগ দিতে পারেননি।রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী
সদ্য প্রয়াত ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর লন্ডনের ওয়েস্টমিন্সটার অ্যাবেতে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশন এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী ১৫ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে রওয়ানা করে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে অবস্থান করার কথা ছিল। কিন্তু আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠান হওয়ায় আরও একদিন লন্ডনে অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সেখানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। আশা করা হচ্ছে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ওইদিন নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা করবেন।
লন্ডনের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সম্ভব না হলেও তার পরদিন নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওয়ানা করবেন প্রধানমন্ত্রী। লন্ডনে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী কোনো আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। কেননা, রানি এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিকতা এলাউ করবে না ব্রিটেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন লিজ ট্রাস। প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন অবস্থানকালে নতুন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো সম্ভবনা নেই বলে বার্তা দিচ্ছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। তবে এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করেনি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে লন্ডন এবং নিউইয়র্কে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, সফরের তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম রয়েছে।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নয়াদিল্লি সফরে শেষ মুহূর্তে বাদ পড়েন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মন্ত্রীর অসুস্থতার কারণে সফর থেকে বাদ পড়ার বার্তা দেন। শেষ মুহূর্তে মন্ত্রীর সফর থেকে বাদ পড়াকে কেন্দ্র করে নানা আলোচনার জন্ম হয়। পরে অবশ্য ড. মোমেনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসা নিতে দেখা যায়।
এনআই/এসএম