অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে বাংলাদেশিদের হত্যার নিন্দা জানিয়ে এটিকে নিষ্ঠুরতা আখ্যায়িত করেছেন। হত্যা কোনো সমাধান নয় উল্লেখ করে তা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদ সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে মতপার্থক্য নিরসনের চেষ্টা করবে। কারণ এটি বছরের পর বছর বিলম্বিত করা কোনো দেশের জন্যই লক্ষ্য পূরণ করে না।
সীমান্ত হত্যার বিতর্কিত ইস্যু নিয়ে ড. ইউনূস এর নিন্দা জানিয়ে বলেন, হত্যা কোনো সমাধান নয়। তিনি বলেন, ‘কাউকে হত্যা করা কোনো সমাধান নয়, কারণ এটি মোকাবিলা করার আইনি উপায় রয়েছে। এটি পরিচালনা করার জন্য একটি স্থল প্রক্রিয়া এবং আইনি পদ্ধতি থাকতে হবে। এটা একতরফা ব্যাপার। দেশ দখলের জন্য কেউ সীমান্ত অতিক্রম করছে না। যারা গুলি করে হত্যা করছে তারা শুধুই নির্লজ্জ। এটা উদাসীনতা। এটা বন্ধ করতে হবে।’
দু’দেশের মধ্যে পানি বণ্টন সমস্যা অবশ্যই আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী সমাধান করতে হবে উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো অববাহিকার দেশগুলোর সুনির্দিষ্ট অধিকার রয়েছে, যা তারা সংরক্ষণ করতে চায়। তিনি বলেন, এই ইস্যু (পানি বণ্টন) নিয়ে বসে এটা কোনো উদ্দেশ্য সাধন করছে না। কতটুকু পানি পাবো জানি যদি খুশি না হয়ে সই করি, তাহলেই ভালো হয়। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে।’ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে সমস্যা সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব চাপ দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নতুন সরকার তা অনুসরণ করবে।
ড. ইউনূস পিটিআইকে বলেন, ‘ধাক্কা একটি বড় শব্দ; আমি তা বলছি না। আমরা তা অনুসরণ করব। কিন্তু আমাদের একসঙ্গে বসে এর সমাধান করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এটা নতুন কোনো ইস্যু নয়, অনেক পুরনো ইস্যু। এ বিষয়ে আমরা একাধিকবার কথা বলেছি। পাকিস্তান শাসনামলে এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আমরা সবাই যখন চেয়েছিলাম এই চুক্তি চূড়ান্ত হোক, তখন ভারত সরকারও এর জন্য প্রস্তুত ছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তাতে রাজি ছিল না। আমাদের এর সমাধান করতে হবে।’
বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি এবং ঢাকা থেকে বন্যার জন্য ভারতকে দায়ী করে প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কে ড. ইউনূস বলেন, চুক্তি সই না হওয়া পর্যন্ত এ ধরনের সংকট মোকাবিলায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যেতে পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘ভারতীয় হাইকমিশনার আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন, আমি বলেছিলাম, বন্যার সময় কীভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় তা দেখার জন্য আমরা আরও ভাল ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে পারি। দুই দেশের মধ্যে এমন সমন্বয়ের জন্য আমাদের কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মানবিক কারণে এটি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে পারি এবং এটি সমাধান করতে পারি। কারণ এটি জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করবে। এ ধরনের মানবিক পদক্ষেপ সত্যিই সহায়ক হবে।’