অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনূসের সঙ্গী হলেন নিজ এলাকা চট্টগ্রামের চারজন। তাঁরা হলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের আলোচিত অভিযান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে ‘অপারেশন জ্যাকপটে’ অংশ নেওয়া নৌকমান্ডো ফারুক-ই আজম বীর প্রতীক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমির ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন, কৃষি বিষয়ক গবেষণা সংস্থা উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক চন্দনাইশের ফরিদা আখতার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক এমডি ও গ্রামীণ শিক্ষার এমডি হাটহাজারীর নুরজাহান বেগম।
এছাড়া পাহাড় থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা রয়েছেন ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ নিয়েছেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন, ফরিদা আখতার ও নুরজাহান বেগম। তবে ঢাকার বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি ফারুক ই আজম বীরপ্রতীক এবং সুপ্রদীপ চাকমা। শুক্রবার তাঁদের শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে।
ফারুক-ই-আজমের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনাকালে তিনি উচ্চ-মাধ্যমিক পাস করেন। ওই সময় তিনি খুলনায় অবস্থান করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছে নৌবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রিক্রুট হন। পলাশিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ১ আগস্ট অপারেশনের জন্য তাঁকে মনোনীত করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ আগস্ট ৩৭ জন সদস্যের দুটি দল চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ওই অপারেশনে অংশ নেন। এতে উপ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন ফারুক-ই-আজম। এই অপারেশনে অস্ত্রবাহী বড় বড় তিনটি জাহাজ ধ্বংস করা হয়।
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইনের বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার মাদার্শা ইউনিয়নের মক্কার বাড়িতে। তাঁর বাবা মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ একজন ইসলামি পণ্ডিত ছিলেন।
১৯৮২ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) ও ১৯৮৩ সালে একই বিষয়ে এমএ পাশ করেন। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ নিয়ে ‘হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর খুতবা: একটি সামাজিক-সাংস্কৃতিক গবেষণা’ বিষয়ের উপর পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
১৯৮৭ সালে সাতকানিয়া আলিয়া মাহমুদুল উলুম ফাযিল মাদ্রাসায় আরবি ভাষা ও সাহিত্যের প্রভাষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম ওমরগণি এমইএস কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ছিলেন।
২০০৭ সাল থেকে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার ধর্মীয় ও সাহিত্য বিষয়ক মুখপত্র মাসিক আত তাওহীদের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে আছেন। এছাড়া তিনি হালিশহর এ-ব্লক হজরত উসমান (রা.) জামে মসজিদের খতিব, আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরির মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়া ফরিদা আখতার চন্দনাইশ পৌরসভার হারলা (আব্দুল বারি সওদাগর) গ্রামে। পড়াশোনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে। বর্তমানে তিনি উবিনীগ (উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা) এর নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এছাড়া নুরজাহান বেগম গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান। তাঁর বাড়ি ড. ইউনূসের নিজ গ্রাম বাথুয়ায়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান সুপ্রদীপ চাকমা রয়েছেন ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্তব্যরত রয়েছেন। ২০২৩ সালে ২৪ জুলাই তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
সুপ্রদীপ চাকমার জন্ম ১৯৬১ সালে খাগড়াছড়ির কমলছড়িতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি সপ্তম বিসিএসে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। মেক্সিকো ও ভিয়েতনামে রাষ্ট্রদূত ছিলেন সুপ্রদীপ চাকমা। এ ছাড়া রাবাত, ব্রাসেলস, আঙ্কারা এবং কলম্বোতে বাংলাদেশ মিশনেও তিনি বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন।