শুরুটা ছিল নিছক সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। দিন যত গড়াচ্ছে এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন। ব্যাপক সহিংসতা ও নাশকতায় হতাহতের ঘটনার পর কয়েক দিন আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত থাকলেও গত দুই দিন ধরে তা আবার জোরালো হয়েছে। ঘটেছে সহিংসতার ঘটনা। এই অবস্থায় সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। এই দাবিতে আগামীকাল রোববার (৪ আগস্ট) থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা এবার এই আন্দোলন নিছক নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চাচ্ছেন না। এজন্য তারা সরকারের আলোচনার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে এক দফা ঘোষণা করেছেন। অসহযোগ আন্দোলনে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সরকারের পদত্যাগের পর একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছেন তারা।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে জনসমর্থন বাড়ছে। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রকাশ্যে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অনেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (৩ আগস্ট) শিক্ষার্থীদের চলমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের ৪৮ শীর্ষ ব্যবসায়ী। তারা জানিয়েছেন প্রাণহানির মধ্যে ব্যবসায়ীরা চুপ করে বসে থাকতে পারে না।
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করেন ইরাফ কম্পোজিট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফজলে শামীম এহসান, শাসা ডেনিম লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শামস মাহমুদ, সায়েম ফ্যাশন লিমিটেডের ডিরেক্টর আবরার হোসাইন সায়েমসহ তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের ৪৮ শীর্ষ ব্যবসায়ী।
এক বিবৃতিতে আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা বলেছেন, ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে আমরা নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে এটা দেখতে পারি না যে, নিরপরাধ জীবনের ক্ষতি হচ্ছে ও মানুষের দাবি শোনা হচ্ছে না। একটি স্বাধীন জাতির গর্বিত সদস্য হিসেবে আমরা মনে করি যে, সবারই নিজস্ব অধিকার শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারা উচিত। যারা সাম্প্রতিক ঘটনাবলির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা দেখতে চাই, সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদেরকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে।
শনিবার শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২৬ জন শিক্ষক। তারা শিক্ষার্থীদের হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) থেকে ই–মেইলে ওই বিবৃতি পাঠানো হয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষকরা। শনিবার (৩ আগস্ট) মিরপুর ডিওএইচএস থেকে সাগুফতা পর্যন্ত মৌন মিছিল শেষে এই সংহতির ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তারা জানান, তাদের এই সংহতি ছাত্রদের পক্ষে। সংবিধান ও মানবাধিকার নিশ্চিতের দায় থেকে তারা পথে নেমেছেন।
শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বিভিন্ন বিভাগের ৫১ জন শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার স্বাক্ষরে এই বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এই বিবৃতিতে মোট আটজন অধ্যাপক, ১৩ জন সহযোগী অধ্যাপক, ২৮ জন সহকারী অধ্যাপক এবং দুজন প্রভাষক স্বাক্ষর করেন।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে এদিন রাজপথে নামেন শিল্পী, গীতিকার, সুরকার এবং এ পেশার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। বিকেল ৩টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে শিল্পীদের সংহতি সমাবেশে যোগ দেন নানান শ্রেণি-পেশার হাজার মানুষ। পরে রবীন্দ্র সরোবর থেকে শিল্পীদের নেতৃত্বে হাজার হাজার মানুষ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারের দিকে রওয়ানা হন।
মিছিল থেকে শেখ হাসিনার পতনের এক দফা দাবিতে নানান স্লোগান দেওয়া হয়। রাস্তার মোড়ে পুলিশকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে মিছিল থেকে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা।
বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো শুরু থেকেই এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছে। শনিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাদের দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন।