সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন সরকারের পদত্যাগের এক দফায় রূপ নিয়েছে। আন্দোলন চলাকালে শনিবার (৩ আগস্ট) বন্দরনগরী চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসা এবং চট্টগ্রাম-১০ আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হামলাকারীরা ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এই হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
শনিবার সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিল নগরীর ষোলশহর এলাকা অতিক্রম করার সময় শিক্ষামন্ত্রীর বাসায় হামলা হয়। এসময় মন্ত্রীর বাসভবনে থাকা কয়েকটি গাড়ি ও বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
দুই শতাধিক বিক্ষোভকারী মন্ত্রীর বাসভবনের প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। বাসার সামনে থাকা একটি পাজেরো জিপসহ আরও গাড়ি ভাঙচুর করে। এরপর বৈঠকখানার জানালার কাঁচ, ফুলের বাগান তছনছ করে। এসময় মন্ত্রীর মা ও চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন বাসায় ছিলেন
নগরীর পাঁচলাইশ থানার ডিউটি অফিসার এসআই তৃষা দাস বলেন, ‘মন্ত্রীর বাসায় হামলার সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠানো হয়েছে।’
রাত পৌনে ৮টার দিকে নগরীর বহদ্দারহাট মোড় এলাকায় সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে।
মেয়র গণমাধ্যমকে বলেন, হামলাকারীরা প্রধান ফটক ভেঙে ঘরের আঙিনায় প্রবেশ করে। সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারেনি। হামলার সময় মেয়র রেজাউল করিম বাসার ভেতর ছিলেন বলে জানান তিনি।
চান্দগাঁও থানার ডিউটি অফিসার এসআই সালমা বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়েছে
এদিকে বিকেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল থেকে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসে পুলিশ বক্সে ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াসা এলাকায় মহিউদ্দিন বাচ্চু এমপির রাজনৈতিক কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়া জিইসি মোড়ে এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
শনিবার বিকেল ৩টা থেকে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে দুই ঘণ্টা অবস্থানের পর বিকেল ৫টার কিছু সময় পরে মিছিল নিয়ে টাইগারপাসের দিকে অগ্রসর হন আন্দোলনকারীরা। টাইগারপাস মোড়ে পৌঁছে মিছিলকারীদের একটি অংশ পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। তবে ওই সময় সেখানে কোনো পুলিশ সদস্য ছিলেন না। কর্মসূচি ঘিরেও পুলিশের কোনো উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি।
পরে তারা মিছিল নিয়ে লালখান বাজার হয়ে ওয়াসার দিকে অগ্রসর হন। মিছিল নিয়ে যেতে যেতে ফ্লাইওভাবের দেয়ালে, পিলারে, দোকানের সাঁটারে লাল-কালো রঙে নানা স্লোগান লিখে দেন আন্দোলনকারীরা। মিছিল থেকে নগরের ওয়াসা মোড়ে পেট্রোল পাম্পের পাশে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি প্রধান নির্বাচনী ক্যাম্প হিসেবে অফিসটি ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে তিনি সেখানে মাঝে মাঝে নেতাকর্মীদের নিয়ে বসে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ বলেন, আন্দোলনকারীরা বিনা উস্কানিতে দেওয়ানহাট মোড়ে পুলিশ বক্স ভাঙচুর করে। ওয়াসায় এমপির কার্যালয়, জিইসি মোড়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতে আগুন দেয়। পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে এই হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে এক বিবৃতি দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত ও শিবির চক্রের পরিকল্পিত, ঘৃণ্য ও ন্যাক্কারজনক হামলা ও নাশকতা সহ্যের সীমা অতিক্রম করেছে। আমরা এতদিন সংযত আচরণ করেছি। আজকে যারা আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসভবন ও প্রতিষ্ঠানে হামলা করেছে তাদেরকে ভিডিও ফুটেজে ধারণকৃত ছবিতে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বাড়ি-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা আমরা জানি। উদ্ভুত যেকোনো পরিস্থিতির জন্য বিএনপি-জামায়াত ও শিবির চক্রকে দায়ী থাকতে হবে এবং ছাত্র আন্দোলনের আড়ালে নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞে যারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের প্রতিহত করতে দেশপ্রেমিক জনগণের প্রতি আহ্বান জানাই।