দুই হাজার ৮০০ বর্গফুটের একটি কক্ষ। সেই কক্ষের চারপাশে যত্রতত্র ঝুলছে পরিধেয় কাপড়। মেঝেতে তিন সারিতে বিছানো চৌকি। তার নিচে সারিবদ্ধ ট্রাংক। পুরো কক্ষটি জিনিসপত্রে ঠাসা। এর মধ্যেই গাদাগাদি করে থাকেন ৭৫ শিক্ষার্থী।
এই দৃশ্য পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবাসিক হলের একটি গণরুমের। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন শিক্ষার্থীদের উঠতে হয় গণরুমে। অবশ্য ভিন্ন চিত্র বড়দের (জ্যেষ্ঠ) রুমগুলোতে। বঙ্গবন্ধু হলের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার প্রতিটি রুম বেশ সাজানো-গোছানো। পরিপাটি ওই রুমগুলোর মেঝেতে কারো কারো কার্পেট বিছানো। পর্দা দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জানালার কাচগুলো। কারো কারো রুমে আয়েশি ভঙ্গিতে বসার ব্যবস্থাও আছে। চার আসনের বেশ কয়েকটি রুমেই থাকছেন দুজন করে। করোনার কারণে জ্যেষ্ঠদের মৌখিক পরীক্ষা (ডিফেন্স) না হওয়ায় তাঁরা হল ছাড়ছেন না। ফলে গণরুমে নবীনদের গাদাগাদি।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কাগজে-কলমে শতভাগ আবাসিক। মোট শিক্ষার্থী চার হাজার ১৬৬ জন। ছেলেদের পাঁচটি এবং মেয়েদের তিনটি হলে তিন হাজার শিক্ষার্থী আসন পান। আর ১১টি গণরুমে আরো পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী থাকছেন। এর মধ্যে শের-ই-বাংলা হলের তিনটি গণরুমে ১৮০ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী গণরুমে থাকছেন। এর বাইরের ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে শতাধিক শিক্ষার্থী গণরুমে থাকেন।
বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদের বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মোবাশ্বের আলী থাকেন শের-ই-বাংলা-১ হলের গণরুমে। তিনি বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষার আগে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ছিল। হলের গণরুমে ওঠার পর এমন আবাসন সমস্যার মুখে পড়ব তা স্বপ্নেও ভাবিনি। বস্তির চেয়েও হলের গণরুমের অবস্থা খারাপ। শুক্রবার গোসলের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয়। ’
একই হলের আরেক শিক্ষার্থী স্বচ্ছ আহমেদ। মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের এই শিক্ষার্থী বললেন, ‘গণরুমে এমন অবস্থায় থাকতে হয় যে আত্মীয়স্বজন কাউকে আনা যায় না। তাঁরা আমাদের থাকার জায়গা দেখে বিশ্বাসই করবেন না আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতি আবাসনের। ’
শের-ই-বাংলা হলের গণরুমে সিট পেয়েছিলেন কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ফারহান ও আসিফ। গণরুমের পরিবেশ দেখে তাঁরা পাশের জনতা কলেজ এলাকার একটি মেসে থাকছেন। তাঁরা বলেন, ‘গণরুমে পড়াশোনা হয় না। রাতে ঠিকমতো ঘুমানো যায় না। আবার সকাল ৮টার মধ্যেই বাধ্যতামূলকভাবে উঠতে হয়। ছারপোকার কামড়, নোংরা পরিবেশ, বাথরুমসংকটসহ নানা সমস্যায় পড়তে হয়। ’
শের-ই-বাংলা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মো. রুবেল মাহমুদ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক জাহিদ হাসান জানান , করোনার কারণে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ডিফেন্স শুরু হয়নি। তাই তাঁরা এখনো হলে থাকছেন। স্নাতকোত্তরের নতুন ব্যাচ হলে আছে। তাই এক বছর ধরে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে থাকতে হচ্ছে। এই সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে।
শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেল হল নামের দুটি ১০ তলা আবাসিক হল নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই উপাচার্য স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত হল দুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন হল দুটিতে এক হাজার ২০০টি আসন থাকছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হবে। তখন গণরুম আর থাকবে না। পাশাপাশি আবাসনসংকট যেটুকু আছে তা-ও কেটে যাবে।