ভারতে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে বিচারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।
বুধবার (২২ মে) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এ তথ্য জানান ডরিন।
এর আগে, এমপি আনারের মেয়ে বলেন, আমার বাবার হত্যার বিচার চাই। আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে, এইটা আমি দেখতে চাই। আমরা কাউকে সন্দেহ করছি না। তবে আমার বাবাকে যারা হত্যা করেছে তাদের আমি দেখতে চাই।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) সাড়া সৃষ্টি করে দেন যেন আমি ও আমার বাবা বিচার পাই। কারা করেছে, কেন করেছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি এর শেষ পর্যন্ত দেখতে চাই যে, তারা কেন করেছে, কী কারণে করেছে, আমি বিচার চাই। আমি দরজা দিয়ে দেখতে চাই তাদের ফাঁসি দিয়ে মারা হয়েছে।’
ডরিন বলেন, আপনাদের অনুরোধ আপনারা আমাকে সহায়তা করবেন, আমি আমার বাবার বিচার চাই। আমি স্বচক্ষে দেখতে চাই কারা আমাকে এতিম করলো, কেন করল এভাবে।
আপনি কাউকে চিনেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কাউকে চিনি না। কিন্তু আমি চিনতে চাই। আমি হারুন স্যারকে বলে এসেছি আপনি আইডেনটিফাই করেন। কেন এরকম হলো। কেন এরকম হলো। ল পড়তেছি আমিও কিছু আইন জানি। বলেছি আপনারা তদন্ত করুন, আপনি দেখুন তারা কারা, আমি তাদের চিনি না কিন্তু চিনতে চাই। আমি তাদের প্রকাশ্যে মৃত্যু দেখতে চাই। এভাবে আমাকে এতিম করে দিলো, আমার বাবা—- বলেই তিনি অঝোরে কাঁদতে থাকেন।
তার বাবার সাথে কি কথা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে সর্বশেষ কথা হয় তিনি ভিডিও কলে বলেছেন, আম্মু আমি ইন্ডিয়ায় যাচ্ছি ফিরে এসে দেখা করব। তোমার দুই দাঁতের সমস্যা। ডাক্তার দেখানো কথা। আমি তোমাকে ফিরে এসে নিয়ে যাবো। তুমি যেও না। ডক্টর ফোন করলে তুমি বলবা আব্বু ইন্ডিয়ায় গেছে। আব্বু এসে নিয়ে যাবে। তুমি থাক আমি আসছি। এই কথা বলে গেছে আমার সাথে। তারপরে আর কথা নাই।
কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা জানতে চাইলে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি কাউকে সন্দেহ করছি না। কিন্তু আমি তাদেরকে দেখতে চাই। পরে আমার সন্দেহের কথা প্রকাশ করব।
আসামিদের গ্রেফতারের ব্যাপারে বলেন, যাদেরকে ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে আমি বলছি ধরুক। আমি চাচ্ছি তাদের ধরুক। তাদের ধরলে কোনো না কোনো কিছু বেরিয়ে আসবে। আমি কোনো কিছু জানি না। আমি জানলে তো জেনেই যেতাম।
ডরিন এসময় কেঁদে কেঁদে বলেন, বাবার মতো কেউ হয় না। আমার বাবা আমাকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে এখানে পড়াচ্ছেন। আমি পরীক্ষাও দিয়েছি, সামনে আমার রেজাল্ট হবে। তিনি বলেছেন আমি ইন্ডিয়া থেকে ফিরে এসে তোমার পরীক্ষার রেজাল্ট চেক করব তুমি কেমন করেছো। আমার কোনো কথাই সে রাখল না। আমার শুধু অনুরোধ, আমার বাবার হত্যার বিচার করবেন। আমার বাবা ১৪ বছর মিথ্যা মামলায় ছিলেন। যখন ছোট ছিলাম তখন তাকে পাইনি। যখন আমার একটু বুঝ হয়েছে তখন আমার বাবাকে কাছে পেয়েছি, এখন হারিয়ে ফেললাম।
মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বলেন ‘আজকে আমি এতিম হয়ে গেছি। আমার পড়ালেখা শেষ হয়নি। আজকে আমি মাঝপথে। যার বাপ থাকে না, তার কেউ থাকে না। এতিম হয়ে যায়। যতোই কাছের আত্মীয় আপন মানুষই থাকুক।’
উল্লেখ্য, ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীমের আনারের মরদেহ বুধবার (২২ মে) কলকাতার নিউটাউন থেকে উদ্ধার করা হয়।