ঢাকাবুধবার, ১৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

বেপরোয়া এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা, অনেকটা নমনীয় আওয়ামী লীগ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ৪, ২০২৪ ১২:৪৪ অপরাহ্ণ
Link Copied!

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তবে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনরা বেপরোয়া হয়ে উঠলেও অনেকটা নমনীয় রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অবশ্য আওয়ামী লীগ বলছে, এমপি-মন্ত্রীদের পরিবার বলতে বোঝায় স্ত্রী-সন্তান। আর আত্মীয়-স্বজনরা তো পরিবারের কেউ নন। তারপরও ইতিমধ্যে কেউ কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এ ছাড়া এখনও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এতে নির্বাচন কেন্দ্র করে সহিংসতা যাতে না হয়, তার জন্য বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে দল।

গত বৃহস্পতিবার গণভবনে থাইল্যান্ড সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রীদের স্বজনদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা রয়েছে কি না সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। সে ক্ষেত্রে যারাই জিতে আসে আসুক, মানুষ যাকে চাইবে সে-ই আসবে। ফ্যামিলি ফর্মুলা কী, নিজে, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী; এই তো? এর বাইরে তো পরিবার হয় না। একবার হিসাব করেন তো, কয়জনের (মন্ত্রী-এমপি) ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী ভোটে দাঁড়িয়েছে। হ্যাঁ, আমি বলেছিলাম। কারণ হচ্ছে, আমরা চাইছি, ইলেকশনটা প্রভাবমুক্ত যেন হয়, মানুষ যেন স্বাভাবিকভাবে ভোটটা দিতে পারে। সেটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। দলে অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে একেকটা জায়গায়, তারা আগে থেকেই, যিনি এমপি হয়েছেন তারও বহু আগে থেকে নির্বাচন করে কেউ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কেউ পৌর চেয়ারম্যান, সে রকম ট্রেডিশনালি আছে। তাদের আমরা মানা করি কীভাবে? তবে এটা ঠিক হয়তো এক জায়গায় বউকে দিল, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিল, আরেক জায়গায় আরেকজনকে দিল, এইগুলো আসলে ঠিক নয়। আমাদের কর্মীদেরও মূল্যায়ন করা উচিত। আর যেন বেশি প্রভাব না ফেলে। সবাই দাঁড়িয়েছে, ইলেকশন করছে। এর লক্ষ্যটা হলো নির্বাচনটাকে অর্থবহ করা।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে যেহেতু বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি, সে কারণে উপজেলা নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও অর্থবহ করতে আগের সিদ্ধান্ত থেকে অনেকটা সরে এসেছে দল। ইতিমধ্যে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন, তাতে তিনি অনেকটা স্পষ্ট করেছেন, যাতে এমপি-মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার না করে। তারা যাতে প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে প্রভাব বিস্তার না করতে পারেন। মূলত আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসার কারণ হলো নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করা। তবে আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা যেটি বোঝাতে চেয়েছেন, সেটি হলো, এমপি-মন্ত্রীদের ছেলেমেয়ে ও স্ত্রী বা স্বামীরা যাতে নির্বাচনে মাঠে না থাকেন। ফলে এটা বলা যেতেই পারে এমপি-মন্ত্রীদের যে স্বজন রয়েছে-চাচাতো ভাইবোন, মামাতো ভাইবোন, খালাতো ভাইবোন, শ্যালক, শ্যালিকা, সম্বন্ধি-এমন কেউ নির্বাচন করলে সেখানে দল থেকে তেমন কোনো মানা নেই। বলা যায়, তাদের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অনেকটা নমনীয়। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো এমপি-মন্ত্রীর স্বজনরা কিছুটা বেপরোয়া হতে পারে। কিন্তু নির্বাচনটি তো অংশগ্রহণমূলক হবে। তবে স্বজনদের ছাড় দেওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় সহিংসতা হতে পারে। কারণ যারা এমপি-মন্ত্রীর কাছের মানুষ তারা কোনোভাবে ছাড় দেবে না। যারা ত্যাগী রাজনীতিবিদ, তাদের যেমন টাকা নেই। লাঠিয়াল বাহিনীও কম। সে কারণে তাদের এমপি-মন্ত্রীর স্বজনদের কাছে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়বে।

উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৮ মে প্রথম দফায় ১৫০টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৬৬টি উপজেলা পরিষদে ভোট হবে আগামী ২১ মে। আর তৃতীয় দফায় ১১২টি উপজেলা পরিষদে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ২৯ মে। চতুর্থ দফায় ৫৫টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ৫ জুন। এর আগে ক্ষমতাসীন দলটি দলীয় প্রতীক নৌকা তুলে নিয়েছে। কিন্তু দলের কেন্দ্র থেকে দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের সন্তান ও স্বজনরা অংশ নিতে পারবেন না এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি কোনো দলীয় এমপি-মন্ত্রীরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রভাব খাটাতে পারবেন না। এর ব্যত্যয় ঘটলে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।  এরপরও দলীয় এমপি-মন্ত্রীদের কয়েকজনের সন্তান ও স্বজনরা ভোটের আগেই নানা অসংগতি ও অনিয়মের জন্ম দিয়েছেন।

এসব অভিযোগ দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নজরে আসে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। এরপরও উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের দূরে থাকার নির্দেশনা অমান্য করে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন। আর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুন অর রশীদ হীরা, আওয়ামী লীগের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাহজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের চাচাতো ভাই আতাউর রহমান আতা। নোয়াখালীর দুই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় এমপির স্বজনরা এখনও তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব চৌধুরী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি।

এই উপজেলার নির্বাচন সারা দেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে সম্প্রতি এমপি একরামুল করিম চৌধুরীর বক্তব্য নিয়ে। তিনি ছেলের সমর্থনে একটি সভায় বক্তব্যে বলেছিলেন আমার ছেলেকে যে এলাকা থেকে ভোট কম দেওয়া হবে সে এলাকায় উন্নয়ন বন্ধ করে দেওয়া হবে। তার এই বক্তব্য সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম হয়। পরে একরামুল চৌধুরী বলেছেন, আমার ছেলের বয়স ১৮ বছরের বেশি, আমি বললেই তিনি আমার কথা শুনবে না। ফলে নির্দেশনা অমান্য করে এমপি একরামের ছেলে শাবাব চৌধুরী তার সভা সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন। অন্যদিকে হাতিয়া উপজেলা নির্বাচনে এমপি মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ও ছেলে প্রার্থী হয়েছেন। স্ত্রী আয়েশা ফেরদৌস সাবেক এমপি। তারাও মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। সব মিলিয়ে মন্ত্রী-এমপির ৩৭ জন স্বজন নির্বাচনের মাঠ ছাড়েননি। এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। এরমধ্যে ১৩ জনের মতো আছেন প্রথম দফা নির্বাচনে। বাকিরা দ্বিতীয় দফা নির্বাচনে ভোট করবেন। তবে ভোটের মাঠ ছেড়েছেন সাবেক মন্ত্রী ও গোলাম দস্তগির এমপির ছেলে গোলাম মর্তুজা পাপ্পা।

অন্যদিকে শুক্রবার ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজের ও অন্যান্য মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, আমার এক স্বজনও উপজেলায় প্রার্থী হয়েছেন। সেখানে প্রশ্নটা হচ্ছে, আমাদের সমর্থন আছে কি না। আমি তার পক্ষে প্রশাসন বা নির্বাচনকে প্রভাবিত করছি কি না সেটাই দেখার বিষয়। পার্টির কারও এর সঙ্গে কোনো সংযোগ নেই। নেতৃস্থানীয় কারও এর সঙ্গে কোনো সমর্থন নেই। আমার সমর্থনের তো প্রশ্নই উঠে না। অনেকেই এরমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে শুরু করেছেন। আমাদের কয়েকজন আগেই প্রত্যাহার করেছেন। আমাদের গোলাম দস্তগীরের ছেলে প্রত্যাহার করেছেন। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন থেকে সরে যাবে না সেটাও বলা যায় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে গাইডলাইন সেটা আমি মুখে বলব একটা, আর কাজে করব আরেকটা, এটায় বিশ্বাসী নই। কোনো স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় দেব না।