চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) দালাল চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে আছে রোগী ও তাদের স্বজনরা। এখানে দালাল ছাড়া রোগী ভর্তি থেকে শুরু করে কোনো সেবাই পাওয়া যায় না। দালালদের বিরুদ্ধে কথা বললে বা তাদের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলেই মারধর বা হেনস্তার শিকার হতে হয়।
হাসপাতাল এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, সিএনজি, অটোরিকশা এবং ইজিবাইক চালকদের নিয়ে দালাল চক্র তৈরি করা হয়। দালালরা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও সেবার অপ্রতুলতার বর্ণনা দিয়ে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার প্রতি রোগীদের আস্থার সংকট তৈরি করে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ছাড়া চিকিৎসকরা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিলে সেগুলো দ্রুত করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এবং কমিশন পাওয়ার আশায় বিভিন্ন কৌশলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায়।
শয্যা ও ওয়ার্ড সিন্ডিকেট
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা সাধারণ রোগীরা ভর্তি হওয়ার পর তারা নানা সমস্যায় পড়েন। প্রথমেই জরুরি মুহূর্তে রোগীকে বহনের ট্রলি থেকে শুরু করে শয্যা বা ওয়ার্ড পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে দালালরা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।
দুরারোগ্য রোগের ভীতি সঞ্চার
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য রোগী আগমন করা মাত্রই দালালরা রোগীর মধ্যে একটা ভীতি সঞ্চারের মাধ্যমে কোনো বড় ধরনের রোগের কথা বলে বেসরকারি কোনো ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভর্তি করায়। ফলে রোগীরা সরকারি হাসপাতালের বিনা মূল্যের চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। এতে অধিক অর্থ ব্যয় করে রোগী ও তার স্বজনরা সর্বস্বান্ত হয়ে বাড়ি ফেরেন। দালালদের প্রলোভনে পড়ে মানহীন হাসপাতালে যাওয়ায় অনেক সময় সুচিকিৎসার অভাবে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে।
অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট
হাসপাতালে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তার অপ্রতুলতার কথা বাড়িয়ে বর্ণনা করে সিন্ডিকেটকারীরা দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেবে মর্মে ব্যক্তিমালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স বেশি টাকায় ভাড়া দেয়। এমনকি চিকিৎসাধীন কোনো রোগী এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তর করার প্রাক্কালে এবং কোনো রোগী মৃত্যুবরণ করলেও হাসপাতাল থেকে তার মরদেহ বহনেও সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে।
কমিশন বাণিজ্য
একজন রোগী হাসপাতালে আগমনের পর ভর্তি থেকে শুরু করে রোগী বহনের জন্য ট্রলি, শয্যা বা ওয়ার্ড পাইয়ে দেওয়া, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরিদর্শন পিছন থেকে সামনে নেওয়া, স্বল্পমূল্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেওয়া, তাৎক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা, স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের ওষুধ কেনাসহ সব ক্ষেত্রে রোগীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কমিশন বাণিজ্য করে আসছে।
এ ছাড়া রোগীদের বিনা মূল্যের ওষুধ থেকে বঞ্চিত করে স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের ওষুধ কিনে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কমিশনপ্রাপ্ত নির্দিষ্ট ফার্মেসিতে নিয়ে যায়। পরে ফার্মেসি ওষুধের কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে ওষুধ বিক্রি করে রোগীর কাছে।
এ অবস্থায় সরকারি হাসপাতালের চরম ইমেজসংকট তৈরি হয়েছে। রোগীর কাছে ভোগান্তির অপর নাম হয়ে দাঁড়ায় সরকারি হাসপাতাল।
এসবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার র্যাবের একটি টিম অভিযান চালিয়ে ৩৮ দালালকে গ্রপ্তার করেছে। র্যাব-৭-এর সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন সময়ে দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করি। দালালরা রোগী ও তাদের স্বজনদের জিম্মি করে রেখেছে। এখন থেকে আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।’