পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) প্রধান ইমরান খান বলেছেন, ‘আমি খুব বিপজ্জনক’। একইসঙ্গে যারা বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাদের দেশের সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) পাকিস্তানের একটি আদালতের বাইরে এই মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার (২৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন নারী অতিরিক্ত দায়রা জজকে নিয়ে হুমকিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সন্ত্রাসবিরোধী আদালত (এটিসি) থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পাওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেন ইমরান খান।
বৃহস্পতিবার ওই আদালত থেকে এক লাখ টাকার জামানত মুচলেকায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গ্রেপ্তার-পূর্ব জামিন গ্রহণ করেন তিনি। পরে আদালতের বাইরে ইমরান বলেন, যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাদের দেশের সম্পর্কে চিন্তা করা উচিত। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুব বিপজ্জনক’।
দ্য নিউজ বলছে, এদিন আদালতে পৌঁছানোর পর ইমরান খান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান। তবে সেখান থেকে বের হওয়ার পথে ইমরান একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জোর দিয়ে কেবল একটি বাক্য উচ্চারণ করেন, আর তা হলো: ‘আমি খুব বিপজ্জনক’।
পরে আদালত প্রাঙ্গণের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তাদের দেশের কথা ভাবা উচিত। তিনি বলেন, এ মামলায় দেশের সবচেয়ে বড় দলের প্রধানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
শনিবার ইসলামাবাদের জনসমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইমরান খান শাহবাজ গিলের সাথে করা আচরণের দায়ে দেশটির শীর্ষ এক পুলিশ কর্মকর্তা, একজন নারী ম্যাজিস্ট্রেট, পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন।
এরপর বিচারক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে ইমরান খানের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। ইসলামাবাদের মারগাল্লা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের সাত নম্বর ধারায় ওই এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।
সংবাদমাধ্যম বলছে, ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদের অতিরিক্ত দায়রা জজ জেবা চৌধুরীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে ইসলামাবাদ সদর ম্যাজিস্ট্রেট আলী জাভেদের অভিযোগে পিটিআই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের ওই মামলা দায়ের করা হয়।
তবে বৃহস্পতিবার ইমরান খান আবারও বিচারকের সমালোচনার পুনরাবৃত্তি করেন এবং বলেন, তার জনপ্রিয়তার কারণে সরকার ভয় পাচ্ছে। ইমরানের ভাষায়, ‘এই ভয়ের কারণে শুধু নিজেদের বাঁচানোর জন্য, তারা দেশকে উপহাস করছে।’
পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাহবাজ গিলকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের পাশাপাশি যৌন নির্যাতন করা হয়েছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার তিনি করেছেন।
তিনি বলেন, সরকার দেশকে ব্যানানা রিপাবলিকে পরিণত করেছে। এখানে কোনো আইন নেই এবং যে কারও বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগ আনা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে দেশজুড়ে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ করে আসছেন ইমরান খান। এসব সমাবেশে তিনি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন। এ নিয়ে দেশটির রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে; যা চরম আকার ধারণ করে রোববার রাতে ইমরানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ দমন আইনে মামলা হওয়ার পর।
পরে সন্ত্রাসবাদের মামলায় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত অন্তর্বর্তী আগাম জামিন পান ইমরান। আর সে কারণে এদিন আদালতে উপস্থিত হয়ে আবারও জামিনের আবেদন করলে সাবেক এই ক্রিকেটারের দ্বিতীয় দফায় জামিন মঞ্জুর করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, আগামী বছরের অক্টোবরে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন ঘিরে দেশজুড়ে নির্বাচনী সমাবেশ করছেন হওয়া ইমরান খান। তার এসব সমাবেশ ঘিরে দেশটিতে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। তবে ইমরান খান বলছেন, তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে পড়েছে সরকার।