গত বছরের ১৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় চট্টগ্রাম নগরের প্রথম ‘মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এটির উদ্বোধন করেন। নগরের পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার। উদ্বোধনের প্রায় দুই মাস পরও এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলছে না গাড়ি।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এখনও প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের দিকে যানবাহন চলাচলের জন্য একপাশ উন্মুক্ত করার কথা ভাবছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএ। তখন লালখান বাজার হয়ে পতেঙ্গায় গিয়ে নামবে গাড়ি। র্যাম্প নির্মাণ না হওয়ায় মাঝখানে ওঠানামার সুযোগ থাকছে না। র্যাম্পসহ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ করতে অন্তত এই বছর চলে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, পতেঙ্গা থেকে টাইগারপাস পর্যন্ত নির্মাণাধীন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে এখনও টাইগারপাস থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত কাজ চলছে। এ ছাড়া পুরো প্রকল্পে এখনও বিভিন্ন স্থানে কাজ চলমান আছে। এর বাইরেও এটিতে ওঠানামার জন্য ১৪টি র্যাম্প থাকার কথা। এখন পর্যন্ত একটি র্যাম্পও নির্মাণের কাজই শুরু হয়নি। যে কারণে আগামী এপ্রিল মাসে এ উড়াল সড়কে যান চলাচল শুরু হলেও নগরীতে যানজট নিরসনে তেমন কোনও ভূমিকা রাখতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল গত ২৮ অক্টোবর থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রতিদিন গড়ে চার হাজার গাড়ি পার হচ্ছে এ টানেল দিয়ে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু না হওয়ায় নগরীতে বেড়েছে যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ। নগরজুড়ে বেড়েছে ব্যাপক যানজট।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন করেন। ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের কাজ এখন পর্যন্ত প্রায় ৯০ শতাংশ শেষ হয়েছে। আশা করছি এপ্রিল মাসে এটি দিয়ে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে পারবো। এখনও র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। এপ্রিলে লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত গাড়ি চলবে। মাঝখানে ওঠানামার কোনও সুযোগ থাকবে না।’
তিনি আরও জানান, চার হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালের জুনে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। এ কারণে নগরীতে যানবাহনের চাপ বাড়ছে। এখনও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার এ সড়কে শিগগিরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। বাকি কাজ চলমান থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ২৪টি র্যাম্প থাকার কথা থাকলেও এখন হবে ১৪টি। এখনও র্যাম্প নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। আমরা দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করছি। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে এখন কোনও প্রকার টোল আদায় করা হবে না। পুরোপুরি নির্মাণের পর টোল আদায় করা হবে।’
সিডিএ সূত্র জানায়, নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। তিন বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি।
দ্বিতীয় দফায় ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এ দফায় সময় বেড়েছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা। একই সময়ে প্রকল্পের নির্মাণব্যয় বাড়িয়ে চার হাজার ৩৬৯ কোটি সাত লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়।
সিডিএ’র এই প্রকল্প যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স-র্যাংকিন। প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের, ৫৪ ফুট প্রশস্ত এবং চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে থাকবে ১৪টি র্যাম্প। এর মধ্যে জিইসি মোড়ে একটি, টাইগারপাসে দুটি, আগ্রাবাদে চারটি, ফকিরহাটে একটি, নিমতলায় দুটি, সিইপিজেডে দুটি এবং কেইপিজেড এলাকায় দুটি।