গাজা উপত্যকায় গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে মামলা করা হয়েছিল, তার শুনানি শুরু হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার থেকে। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে অবস্থিত জাতিসংঘের এই অঙ্গপ্রতিষ্ঠানটি বিশ্ব আদালত নামেও পরিচিত।
মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ইসরায়েলের প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ এবং বৃহস্পতিবারের শুনানিতে মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিশাসিত এই ভূখণ্ডটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলি সরকারের অন্যতম মুখপাত্র ইলন লেভি।
বুধবার রাজধানী জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে লেভি বলেন, ‘হামাসের ধর্ষকদের রক্ষা করতে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার যে অযৌক্তিক অভিযোগ প্রিটোরিয়া এনেছে, তা মোকাবিলা করতে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) আদালতে ইসরায়েলের প্রতিনিধিদল উপস্থিত থাকবে।’
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে গত ৩০ ডিসেম্বর বিশ্ব আদালতে মামলাটি দায়ের করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
মামলার আবেদনপত্রের সঙ্গে ৮৪ পৃষ্ঠার একটি নথি সংযুক্ত করে দক্ষিণ আফ্রিকা দাবি করেছিল, গাজায় অভিযানরত ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের পাশাপাশি গণহত্যা এবং এ সম্পর্কিত অপরাধে সংশ্লিষ্টতারও প্রমাণ রয়েছে।
জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের গণহত্যা কনভেনশনকে ভিত্তি করে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে— উল্লেখ করে আবেদনে আরও বলা হয়েছিল, ফিলিস্তিনি জাতির একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়েই গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত ৩০ ডিসেম্বর মামলার আবেদন জমা দেওয়ার দিন আইসিজেকে দ্রুত এ বিষয়ে শুনানির অনুরোধ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১১ জানুয়ারি শুনানি শুরুর দিন ধার্য করেন বিশ্ব আদালত।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ইরেজ সীমান্তে হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। অতর্কিত সেই হামলার জবাবে সেদিন থেকেই ইসরায়েলে অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
গত তিন মাসের অভিযানে কার্যত ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা। ইতোমধ্যে সেখানে নিহতের সংখ্যা ২২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং আহত ছাড়িয়েছে ৬০ হাজার। এছাড়া এখনও নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৬ হাজার ফিলিস্তিনি।
অন্যদিকে হামাসের গত ৭ অক্টোবরের হামলায় নিহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিক। সেই সঙ্গে ২৪০ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হামাস। তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় অর্ধেককে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূলের আগ পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান চলবে। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে অভিযোগ উঠেছে— গাজা উপত্যকা দখল এবং সেখানে বসবাসরত ইসরায়েলিদের উচ্ছেদ করতেই এ অভিযান চালাচ্ছে ইসরায়েল।
এই অভিযোগকে আরও দৃঢ় করেছে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার কয়েকজন ডানপন্থী সদস্যের মন্তব্য। সম্প্রতি ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোতরিচ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতামার বেন গিভির বলেছেন, গাজার ফিলিস্তিনিদের উচিত বসবাসের জন্য কোনো নিরাপদ দেশ বেছে নেওয়া।
তবে বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য খারিজ করে দিয়ে নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমি দু’টি পয়েন্ট সম্পূর্ণ স্পষ্ট করতে চাই—(১) গাজা স্থায়ীভাবে দখল করার কোনো আকাঙ্ক্ষা ইসরায়েলের নেই এবং (২) সেখানকার বেসামরিক লোকজনকে উচ্ছেদ করার কোনো পরিকল্পনাও ইসরায়েলের নেই।’