জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী একজন বোবা মানুষ, তিনি কথাই বলেন না। অর্থমন্ত্রীকে বারবার বলা হয়েছে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে, ব্যবস্থা নিন। কিন্তু অর্থমন্ত্রী বোবা মানুষ, কথাই বলেন না। অর্থপাচার নিয়ে সংসদে বিবৃতি দেন না। সাংবাদিকদের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানান না।’ দেশ কীভাবে চলবে জানি না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার সংসদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এস আলম গ্রুপের বিদেশে বিনিয়োগ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি এসব অভিযোগ তোলেন। এর আগে বিকেল পাঁচটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
চুন্নু বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি আজকে ভালোভাবে চলছে না। ডলারের সংকট। ব্যবসা-বাণিজ্য করতে গিয়ে সরকার আমদানি নিয়ন্ত্রণ করছেন। রিজার্ভে সমস্যা। রেমিটেন্স কমে আসছে। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখি টাকা পাচার হচ্ছে। পত্রিকার প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বাংলাদেশের এ অবস্থার মধ্যে একজন ব্যক্তির নাম আসছে, যিনি বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়ী, কয়েকটা ব্যাংকের মালিক। তার সম্পর্কে আসছে তিনি অন্য একটি দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে সিঙ্গাপুরে মার্কেট করেছেন, হোটেল করেছেন এক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে।’
তিনি বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে এক বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ এসেছে। এটা সত্য কিনা জানি না, সত্য হয়ে থাকলে এটা রাষ্ট্রবিরোধী, রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল। এটা নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। হাইকোর্টও দুর্নীতি দমন কমিশনকে দায়িত্ব দিয়েছিল। পরে আবার অপিল বিভাগের আদেশে স্থগিত আছে।’
সংসদ নেতাকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এত বড় একটা ঘটনায় যেখানে তথ্য-প্রমাণসহ আমরা পড়েছি, যেগুলো অবিশ্বাস করাটাও সমস্যা। বিষয়টি গুরুতর, এটা রাষ্ট্রের জন্য। প্রধানমন্ত্রী আপনি অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন, বিষয়টি নিয়ে জরুরিভিত্তিতে তদন্ত করে দেখার জন্য, আসলে কোনো বাংলাদেশি গিয়ে ওখানে ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন কিনা। করলে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে কীভাবে টাকাটা পেলেন, না হয় কোন সোর্স থেকে আনলেন। বাংলাদেশ থেকে না আনলে কীভাবে আসলো। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে তদন্ত করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘একজন কৃষক ঋণ নিলে পরিশোধ না করলে ওয়ারেন্ট হয়। কৃষকের সুদ মাফ করার জন্য আমরা সুপারিশ করলেও সেটা গ্রহণ করা হয় না। কিন্তু দেখলাম নাসা গ্রুপের ঋণে ২৫২ কোটি টাকার সুদ মাফ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পর্যবেক্ষকের আপত্তি সত্ত্বেও সেটা মাফ করা হয়েছে। তিনি শিল্পপতি। এ ব্যাংক সম্পর্কে আরও অনেক প্রশ্ন আছে। যেহেতু রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক, তারা কি করছে সেটা আমরা জানতে চায়।’
এদিকে পরে সংসদে পাসের জন্য উত্থাপিত একটি বিলের ওপর আলোচনার সময় মুজিবুল হক তাকে জড়িয়ে সিঙ্গাপুরে বৈঠক সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের প্রতিবাদ করেন। ওই গণমাধ্যমের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ফখরুল ইমাম জানালেন তিনি কাশ্মীর গিয়েছিলেন। আমি ২৪ আগস্ট স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যাংককে গিয়েছিলাম। ব্যাংকক থেকে এসেছি ২৮ আগস্ট। বাংলাদেশ প্রতিদিনের মতো একটি পত্রিকায় প্রথম পাতায় রিপোর্টে আমি এবং ফখরুল ইমাম সিঙ্গাপুর নাকি কার সঙ্গে মিটিং করতে গিয়েছি। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। মিথ্যা ভিত্তিহীন রিপোর্ট তারা ছেপেছে। যদিও আমি প্রতিবাদ দিয়েছি।’