নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচারিক কার্যক্রম স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে ১৬০ জন বিশ্বনেতার বিবৃতিকে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার ওপর অযাচিত হস্তক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম।
তিনি বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে এসে বিচার পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে আসুন, দেখুন কত স্বচ্ছতার সঙ্গে ড. ইউনূসের মামলার বিচারকাজ চলছে।’ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।
খুরশীদ আলম বলেন, বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের আইন, বিচার বিভাগকে না জেনে, পর্যালোচনা না করে অযাচিতভাবে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করছেন। তারা আদালতে ড. ইউনূসের মামলা নিয়ে এত মাতামাতি করছেন কেন আমার বুঝে আসে না।
বিবৃতি দেওয়া বিশ্বনেতাদের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আসুন, দেখুন কত স্বচ্ছতার সঙ্গে ড. ইউনূসের মামলার বিচারকাজ চলছে। শুধু ড. ইউনূসের কথায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ নিয়ে বিরূপ ধারণা পোষণ করবেন না।
প্রসঙ্গত, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন ১৬০ জন বিশ্বনেতা। ওই চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে ১০০ জনেরও বেশি নোবেল বিজয়ীসহ রাজনীতি, কূটনীতিক, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের অগ্রগণ্য ব্যক্তিরা রয়েছেন।
সোমবার স্বাক্ষরকারীদের একজন, রেজাল্টস অ্যান্ড সিভিক কারেজের প্রতিষ্ঠাতা স্যাম ডেলি-হ্যারিস এক বিজ্ঞপ্তিতে ওই খোলা চিঠিটি প্রকাশ করেন। চিঠিতে স্বাক্ষর করা বিশ্বনেতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন, পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস-হোর্তা, আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট মেরি রবিনসন, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, মেক্সিকোর সাবেক প্রেসিডেন্ট ভিসেন্ট ফক্স, সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর, রোটারি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী জন হিয়োকো, উইকিপিডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা জিমি ওয়েলসের মতো আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।
চিঠির শুরুতে ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ সম্বোধন করে লেখা হয়েছে, আমরা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী, নির্বাচিত কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের নেতার পাশাপাশি বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে লিখছি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আপনাদের জাতি যেভাবে প্রশংসনীয় অগ্রগতি অর্জন করেছে আমরা তার প্রশংসা করি।
এতে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মানবাধিকারের প্রতি যে হুমকি আমাদের উদ্বিগ্ন করে তা হলো- শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা। আমরা উদ্বিগ্ন, সম্প্রতি তাকে টার্গেট করা হয়েছে। এটা ক্রমাগত বিচারিক হয়রানি বলেই আমাদের বিশ্বাস। এর আগে ৪০ জন বিশ্বনেতা তাঁর নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে আপনার কাছে যে আবেদন করেছিলেন এই চিঠিটি তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে তোলারই চেষ্টা। আমরা বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আপনি অবিলম্বে অধ্যাপক ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে বর্তমান বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত করুন।
চিঠির শেষাংশে বলা হয়, ‘আমরা আশা করি, আপনি এই আইনি সমস্যাগুলোর সমাধান একটি সমীচীন, নিরপেক্ষ এবং ন্যায়সংগত পদ্ধতিতে নিশ্চিত করবেন। এর পাশাপাশি আগামী দিনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন এবং সব ধরনের মানবাধিকারের প্রতি সম্মান (প্রদর্শন) নিশ্চিত করবেন। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এই বিষয়গুলোর সমাধান করা হয় তা ঘনিষ্ঠভাবে নজরে রাখার জন্য আমরা বিশ্বের লাখ লাখ উদ্বিগ্ন নাগরিকদের শিবিরে যোগ দেব।’
চলতি বছরের মার্চে বাংলাদেশ সরকারের আচরণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে খোলা চিঠি লিখেন রাজনীতি, কূটনীতি, ব্যবসা, শিল্পকলা ও শিক্ষাক্ষেত্রের ৪০ জন বিশ্বনেতা। ওই চিঠির ধারাবাহিকতায় এবার ১৬০ জন বিশ্বনেতা প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠালেন।
এর আগে রোববার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চিঠি লিখেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। একদিন পরই ১৬০ বিশ্বনেতা ড. ইউনূস ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখলেন।