ঢাকাশনিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

দুঃসংবাদ: দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
আগস্ট ২২, ২০২৩ ১:০১ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পেঁয়াজ রফতানিতে ভারতের ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের মাত্র একদিনের ব্যবধানে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যটির দাম বেড়েছে প্রায় ৪০ শতাংশ। যদিও শুল্কারোপ হওয়া কোনো পেঁয়াজ এখনো দেশে আসেনি। আগের আমদানি করা পেঁয়াজে বাড়তি মুনাফার কারণে আবারো পণ্যটির দাম অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। কোথাও কোথাও দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই ব্যবস্থা না নিলে বাজারকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে মুনাফালোভীরা।

 

ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইকারি বাজারে শনিবার পর্যন্ত কেজিপ্রতি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪২-৪৫ টাকা। ওইদিনই ভারতের শুল্কারোপের খবর ছড়িয়ে পড়লে দিন শেষে আমদানীকৃত পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়া হয়। গতকাল প্রতি কেজি ৬০ টাকা ছাড়িয়েছে। সে হিসাবে দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশেরও বেশি। ভারতীয়র পাশাপাশি দেশী পেঁয়াজও কেজিপ্রতি ৬০ থেকে বেড়ে ৭৫ টাকায় গিয়ে উঠেছে। ভারত থেকে আমদানি কমার আশঙ্কায় দেশীয় পেঁয়াজের বাজার আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

 

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত যে পরিমাণ শুল্কারোপ করেছে সে অনুযায়ীই দাম বেড়েছে দেশের পাইকারি বাজারে। তবে দেশী পেঁয়াজের মজুদ কমে আসায় এবার ভারত থেকে বাড়তি দামেই পণ্যটি আমদানি করতে হবে। এক্ষেত্রে কয়েক মাস আগে ওঠা সর্বোচ্চ দামের চেয়েও বেশি দিয়ে ক্রেতাকে পেঁয়াজ কিনতে হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। তাই আমদানি করা এ পেঁয়াজের দাম সবচেয়ে বেশি বাড়বে। এরই মধ্যে একদিনের ব্যবধানে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৫ টাকা।’ সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দিলে সামনে পেঁয়াজের দাম আরো বাড়তে পারে বলে মনে করছেন এ ব্যবসায়ী।

 

দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ৩০ লাখ টন। সর্বশেষ অর্থবছরে ৩৪ লাখ টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। আগের বছরেও প্রায় ৩৬ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে পণ্যটি। তবে মাঠপর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যেতে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ নষ্ট হয় কিংবা শুকিয়ে কমে যায়। সে হিসাবে প্রতি বছরই পেঁয়াজ রফতানি করে চাহিদা পূরণ করতে হয় বাংলাদেশকে। যদিও দেশের কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চলতি বছরের মার্চের মাঝামাঝি থেকে বন্ধ রাখা হয় পেঁয়াজ আমদানি। ফলে গত এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকেই নিত্যপণ্যটির দাম বাড়তে শুরু করে। দেড় মাসের ব্যবধানে প্রায় তিন গুণ বেড়ে প্রতি কেজির দাম হয় ১০০ টাকা। বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে গত ৫ জুন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত ১২ লাখ ৯৩ হাজার ৬৮৪ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) নেন ব্যবসায়ীরা। যদিও নির্ধারিত আইপির এক-চতুর্থাংশ পণ্য দেশে এসেছে। এর আগে শুল্কমুক্ত পণ্য হিসেবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেও বর্তমানে বাড়তি দামেই আমদানি করতে হবে

 

ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় চাহিদা বেশি থাকলেও চট্টগ্রামে দেশী পেঁয়াজের চাহিদা ও দাম দুটোই কম। ভারতের নাসিক জাতের পেঁয়াজের আকার বড় হওয়ায় সেখানকার ভোক্তার কাছে এটিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। চট্টগ্রামের কাঁচাপণ্যের সর্ববৃহৎ পাইকারি বাজার হামিদউল্লাহ মার্কেটের সাধারণ সম্পাদক মো. ইদ্রিস বলেন, ‘রবি মৌসুমের শেষে দেশী পেঁয়াজের মজুদ ধীরে ধীরে কমে আসে। সাম্প্রতিক সময়গুলো দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হওয়ায় মৌসুমের শেষেও কৃষক ও ব্যাপারীদের কাছে যথেষ্ট পেঁয়াজ রয়েছে। তবে বাংলাদেশের মজুদ কমে আসার সময়ই প্রতি বছর ভারত রফতানি নিষেধাজ্ঞা বা শুল্কারোপ করে। যার কারণে দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।’ তবে আমদানি চালু থাকায় আগের মতো দাম অস্বাভাবিক হবে না বলে মনে করছেন তিনি।

 

পেঁয়াজ রফতানিতে ভারতের শুল্কারোপের কারণে দেশে পেঁয়াজের দামে তেমন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছি, দেশে এসেছে মাত্র তিন লাখ টন। এর অর্থ হলো দেশেও পেঁয়াজ আছে। মাঠপর্যায়েও খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দেশের কৃষকের কাছে এখনো তুলনামূলক পেঁয়াজের মজুদ আছে। কাজেই ভারত পেঁয়াজ রফতানিতে ৪০ শতাংশ শুল্কারোপ করলেও দেশে পেঁয়াজের দামে তেমন প্রভাব পড়বে না। শুল্কারোপের ঘোষণায় এখন দাম কিছুটা বাড়লেও কয়েকদিন পর কমে আসবে। তুরস্ক, মিসর ও চায়না থেকেও পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করা হবে।’