ঢাকাশুক্রবার, ১৩ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জামায়াত থাকবে না বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুলাই ১২, ২০২৩ ১২:২৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সরকার পতনে সমমনাদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি। আজ বুধবার ঢাকায় বড় সমাবেশ করে দলটির এক দফার আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা। অর্ধ শতাধিক দল ও সংগঠন সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচিতে শরিক হওয়ার ঘোষণা দেবে। তবে এক সময়ের জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীকে এবার আন্দোলনের সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে না বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব বিএনপির আন্দোলনে না থাকার কথা নিশ্চিত করেছে। বরং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে দলটি।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে আলোচনার বাইরে থাকা জামায়াত আসলে কোন পক্ষে আছে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা ছিল। এর মধ্যেই জামায়াত বিএনপির আন্দোলনে না থাকার কথা জানাল। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘বুধবার ঢাকায় আমাদের কর্মসূচি নেই। আগামী শনিবার সিলেটে সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত।’

 

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, আন্দোলন কর্মসূচিতে জামায়াত কীভাবে ভূমিকা রাখবে, তা জানতে দলটির সঙ্গে গত সোমবার যোগাযোগ করেছিল বিএনপি। জানতে চেয়েছিল– জামায়াত বুধবারের সমাবেশের দিনে কী করবে। জবাবে জামায়াত জানিয়েছে, ১৫ জুলাই সিলেট, ২২ জুলাই চট্টগ্রাম এবং ২৯ জুলাই কুমিল্লায় সমাবেশ করার কর্মসূচি রয়েছে তাদের। পরের মাসে অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও সমাবেশের পরিকল্পনা আছে। তাই আপাতত যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। সমাবেশ করে জামায়াত পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবে।

সূত্রটির দাবি, বিএনপি যোগাযোগ করলেও আসলে তাদের এক দফার কর্মসূচিতে যোগ দিতে জামায়াতকে সেভাবে অনুরোধ করেনি। জামায়াত বারবার নাকচ করলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন– সরকারের সঙ্গে তাদের ‘সমঝোতা’ হয়েছে। বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে থাকলে জামায়াতের ওপর চড়াও হবে না সরকার। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এই গুঞ্জনের সত্যতা না স্বীকার করলেও বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের স্পষ্ট দূরত্ব দেখা যাচ্ছে। জামায়াত নেতারা বলছেন, বিপদে বিএনপিকে পাশে পাওয়া যায় না। তাই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিএনপির সন্দেহ, সমঝোতা করে প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরছে জামায়াত।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব যোবায়ের দীর্ঘ সময় দলের সিলেট মহানগর আমির ছিলেন। তিনি জানান, এখনও পুলিশের অনুমতি না মিললেও তাদের সমাবেশের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে। সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ, প্রস্তুতি সভা করা হচ্ছে। এতে পুলিশ বাধা দেয়নি। কাল বৃহস্পতিবার জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে যাবে অনুমতির বিষয়ে জানতে।

জামায়াত বিনা বাধায় সমাবেশের প্রস্তুতি নিতে পারলেও মাসখানেক আগের চিত্র ছিল ভিন্ন। যুদ্ধাপরাধের বিচারে কোণঠাসা দলটি প্রায় এক যুগ প্রকাশ্য কর্মসূচি পালন দূরে থাক; ঘরোয়া সভাও করতে পারেনি। ঝটিকা মিছিলেই সীমাবদ্ধ ছিল তৎপরতা। তাতেও চলত পুলিশের ধরপাকড়। কিন্তু গত শুক্রবার রাজধানীতে পুলিশের উপস্থিতিতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের মিছিল করে জামায়াত।

১৯৯৯ সালে বিএনপি ও জামায়াতের জোট হয়। সম্পর্কের উত্থান-পতন হলেও গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত তা টিকে ছিল। ওই সময়ে দুই দলের সমঝোতায় জোট বিলুপ্ত করা হয়। জোট ভাঙার পরদিন গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করে ১০ দফা ঘোষণা করে বিএনপি। এর আধঘণ্টা পর জামায়াতও ১০ দফা ঘোষণা করে। কয়েকটি বাক্য ছাড়া দল দুটির ১০ দফা ছিল অভিন্ন। জোট ভাঙলেও ১০ দফার পক্ষে যুগপৎ আন্দোলনে নামার ঘোষণা দেয় বিএনপি ও জামায়াত। এর মধ্যেই ১৩ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। দলটি তখন দাবি করেছিল, বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নামায় তাদের আমিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপি তাঁর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ না করায় জামায়াতের সঙ্গে দেখা দেয় দূরত্ব।

গত ৩০ ডিসেম্বর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো পুলিশের অনুমতি নিয়ে ঢাকায় মিছিল করে। অনুমতি না পেলেও একই দিনে মিছিল বের করে জামায়াত। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় মিছিলকারীদের। দলটির অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হন। তখনও বিএনপি ওই গ্রেপ্তার ও মামলার প্রতিবাদ করেনি।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের জন্য গত ২৪ মে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই নীতিতে বলা হয়, বিরোধী দলের সভা-সমাবেশে বাধাদানকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবে না। এই ঘোষণার ১৫ দিনের মাথায় ঢাকায় সমাবেশের অনুমতি পায় জামায়াত। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকের সঙ্গেও যোগাযোগ চলছে দলটির।

জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, ভিসা নীতি এবং আগামী নির্বাচন উপলক্ষে আন্তর্জাতিক শক্তির তৎপরতায় তাদের প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ মিলেছে। আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ কারাগারে থাকা নেতারা উচ্চ আদালতে জামিন পেলেও মুক্তি পাননি। তবে ঢালাও ধরপাকড় থেমেছে। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নামলে প্রকাশ্য রাজনীতির সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে। আবার আক্রান্ত হলে তখনও বিএনপি পাশে দাঁড়াবে না। তাই ঝুঁকি নিয়ে বিএনপির সঙ্গে থাকা জামায়াতের জন্য লোকসান। যদি এক দফার আন্দোলনকে বিএনপি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে পারে, তবেই জামায়াত এক রকম কর্মসূচি দিয়ে তাতে শামিল হবে।