ঢাকাবুধবার, ২রা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

কার্গো পণ্য নিয়ে কারসাজি,শাহ আমানতে রাজস্ব তলানিতে

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ১০, ২০২৩ ৮:০৯ অপরাহ্ণ
Link Copied!

প্রতি সপ্তাহে শাহ আমানত বিমানবন্দরে দুটি কার্গো ফ্লাইট নামতো। ফিরতি পথে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে রপ্তানির পন্য নিয়ে যেতো। কিন্তু চোরচালান চক্রের কবলে পড়ে বর্তমানে কোন কার্গো ফ্লাইটই নামছে না চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে। ২০১৬ সালে বিদেশি ‘এমিরেটস এয়ারলাইনস’ ঘোষণা না দিয়েই চট্টগ্রাম থেকে পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেয়। এর পর থেকে শুধু ‘ইতিহাদ এয়ারওয়েজ’ চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহন করছে; কিন্তু সেই বিমান সংস্থার সপ্তাহে দুটি শিডিউল ফ্লাইট থাকলেও পণ্য প্রাপ্তির ওপর নির্ভর করে ফ্লাইট চালায়। কখনো সপ্তাহে একটি আবার কখনো দুটি।

 

গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে প্রবাসীদের আনা কার্গো খালাস করতে গড়িমসি করার কারণে বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে চট্টগ্রাম থেকে সবজি রপ্তানির রুট। চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনারের একগুঁয়ে সিদ্ধান্তের কারণে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল পণ্য আমদানি ও রপ্তানির সুযোগ থাকলেও সেই সম্ভাবনা হাতছাড়া হচ্ছে।

 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, কৃষিপণ্যের রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য থাকলেও গত নয় মাসে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৬৮৭ মিলিয়ন ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩২.৩৭ শতাংশ কম।

 

বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিনই কাঁচা মরিচ থেকে শুরু করে লাউ, কুমড়া, বেগুন, ঢ্যাঁড়স, পেঁপে, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল, বরবটি, শিম, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি বিশ্বের অনেকগুলো দেশে রপ্তানি হচ্ছে। তবে রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। তিন বছর আগেও বছরে ১৬ কোটি ডলারের সবজি রপ্তানি হতো। এর পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে রপ্তানি কমতে থাকে।

 

চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট অনিয়মিত হয়ে যাবার কারনে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে শাকসবজি তথা কৃষিপণ্য রপ্তানি ভয়াবহভাবে কমে গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম সাত মাস জুলাই-জানুয়ারিতে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের শাকসবজি রপ্তানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয়েছিল ৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের পণ্য। তার মানে চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে রপ্তানি কমেছে ৪১ দশমিক ৪৫ শতাংশ। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপীয় বাজারে ফল ও শাকসবজির এয়ার-শিপিং থেকে মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই আয় হয়েছিল ৩৮ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, রপ্তানি আয় কমেছে ৬০ শতাংশ।

 

জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয়। গত তিন অর্থবছরজুড়ে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি খাতেও শক্তিশালী অবস্থান পেয়েছে সবজি।

 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বছরে গড়ে ১ হাজার কোটি টাকার সবজি রপ্তানি হয়। মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকাসহ অনেক দেশেই যায় বাংলাদেশের সবজি। তবে যুদ্ধ এবং জ্বালানির প্রতিকূলতায় অন্য অনেক পণ্যের মতো সবজির রপ্তানিও গতি হারিয়েছে। মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলোতে সবজি রপ্তানি কমে যাবা কারন হলো শাহ আমানত বিমানবন্দর ও ওসমানী বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট নামছে না। ফলে কার্গো ফ্লাইটের ফিরতি পথে রপ্তানি পণ্য পাঠানো সম্ভব হয় নি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে সবজি রপ্তানির বাজার ভারত ও চীনের দখলে গেছে। রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রকৃত রপ্তানির মধ্যে ব্যবধান কেবল বাড়ছেই।

 

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসলিম আহমেদ বলেন, ‘ মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলো থেকে প্রবাসীদের আনা কার্গো পণ্য খালাস নিয়ে জটিলতার কারণে এখন কার্গো বুকিং কমে গেছে। ফলে শাহ আমানতে কার্গো ফ্লাইট অনিয়মিত হয়ে যায়। একারণে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে যে পরিমান সবজি রপ্তানি হতো, সেটি বন্ধ। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের কারণে প্রায় ২৫ টন পন্য ওয়্যারহাউজে আটকা পড়েছে। বিমানবন্দরও রাজস্ব হারিয়েছে এই খাতে। ‘

 

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘কার্গো খালাস বন্ধ নেই। একশো কেজির বেশি পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। ‘

 

ব্যাগেজ রুল অনুযায়ী অপর্যটক যাত্রী যৌক্তিক পরিমান পণ্য শুল্ক পরিশোধ করে আনতে পারেন। একশ কেজির কোন সীমারেখা ব্যাগেজ রুলে উল্লেখ নেই। তথাপি সমুদ্র পথে আনা ইউ ব্যাগেজে করে প্রতি যাত্রীর সর্বোচ্চ ছয় হাজার কেজি পণ্যও ছাড় করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, প্রবাসীদের হয়রানি না করে আটকে পড়া কার্গো পণ্য ছাড় করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফোন করেছিলেন ইন্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এমপি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ, রেল মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম এমপি। কিন্তু চট্টগ্রামের কাস্টমস কমিশনার ফায়জুর রহমান শোনেন নি তাদের অনুরোধও।

 

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসীদের পন্য নিয়ে এমিরেটস এয়ারলাইন্স, জাজিরা এবং ওমান এয়ারের কার্গো ফ্লাইট নামতো চট্টগ্রামে। ফিরতি ফ্লাইটে কম খরচে সবজি নিয়ে যেত ফ্লাইটগুলো। প্রতি কেজি দুইশ টাকার মধ্যে পরিবহনের সুযোগে দেশি রপ্তানিকারকরা মধ্যপ্রাচ্যের বাজার দখলে নেয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিমানে দ্বিগুন খরচে সবজি পাঠাতে হচ্ছে। ফলে চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে সবজি রপ্তানি এক প্রকার বন্ধ। একই পরিস্থিতি সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরেও।

 

বিদেশি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করে দেবার পুরো পুরো প্রক্রিয়াটি কিছু অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে করা করেছেন বলে অভিযোগ রপ্তানিকারকদের।

 

বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবল অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফভিএপিইএ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মনসুর বলেন, ‘নানা কারণে আমাদের রপ্তানিখাত বারবার হোঁচট খাচ্ছে। সম্ভাবনা থাকলেও আমরা নতুন নতুন বাজার ধরে রাখতে পারছি না। পরে ভারত ও পাকিস্তান সেটা দখল করে নিচ্ছে। ’