ঢাকামঙ্গলবার, ১লা অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

তিতাস ১৫৯২ টাকা করতে চায় দুই চুলার বিল

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ১৭, ২০২৩ ৮:৩৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি তার মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের মাসিক বিল পুনর্নির্ধারণ করতে চায়। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে সম্প্রতি তারা একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে এক চুলার বর্তমান বিল ৯৯০ টাকার সঙ্গে ৩৯০ টাক যোগ হয়ে নতুস বিল এক হাজার ৩৮০ টাকা হবে। দুই চুলার বিল এক হাজার ৮০ টাকার সঙ্গে ৫১২ টাকা যোগ হয়ে নতুন বিল হবে এক হাজার ৫৯২ টাকা। এতে গ্যাসের বিল ৩৯ থেকে ৪৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।এ বিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. নুরুল আমিন বলেন, মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস ব্যবহার পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব তিতাস বিইআরসিতে দিয়েছে। প্রস্তাবটি কমিশন সভায় উত্থাপন করে এর যৌক্তিকতা পরীক্ষা করা হবে।

মিটারবিহীন এক চুলা ও দুই চুলার মাসিক বিল পুনর্নির্ধারণে বিইআরসিতে পাঠানো তিতাসের প্রস্তাবে বলা হয়, বিইআরসি এক চুলার ক্ষেত্রে ৫৫ ঘনমিটার ও দুই চুলার ক্ষেত্রে ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার নির্ধারণ করায় সিস্টেম লস বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে একটি লাভজনক সরকারি প্রতিষ্ঠান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার ও দুই চুলার বিপরীতে মাসিক গ্যাস ব্যবহার যথাক্রমে ৭৬.৬৫ ও ৮৮.৪৪ ঘনমিটার পুনর্নির্ধারণের আবেদন করে তিতাস। এ আবেদন অনুসারে প্রতি ঘনমিটার ১৮ টাকা করে এক চুলার বিল হবে এক হাজার ৩৮০ টাকা এবং দুই চুলার এক হাজার ৫৯২ টাকা। প্রস্তাবের পক্ষে তিতাস যুক্তি দিয়েছে, মিটারবিহীন আবাসিক গ্যাস ব্যবহারকারীরা বিইআরসি নির্ধারিত সীমার চেয়ে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহার করে।প্রস্তাবে বলা হয়, মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহক রান্নাবান্নার কাজ ছাড়াও পানি বিশুদ্ধ করতে গ্যাসের চুলা ব্যবহার করে। বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক ও আবাসিক এলাকার সাবলেট ভাড়াটিয়ারা পালাক্রমে একাধিক পরিবারের রান্নার জন্য গ্যাস ব্যবহার করে। এতে গড় ব্যবহারের তুলনায় ওই সব এলাকায় বেশি গ্যাস ব্যবহৃত হয়। তিতাস গ্যাস বৃহত্তর ঢাকা ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করছে।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, যাদের প্রি-পেইড মিটার নেই, তারা সীমাহীন গ্যাস ব্যবহার করে। বরাদ্দের চেয়ে বেশি পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার করে। এ বিষয়ে তিতাসের নিজস্ব অনুসন্ধান ও জরিপের তথ্য বিইআরসিকে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেছেন, ‘মিটারবিহীন ব্যবহারকারীদের জন্য তিতাস গ্যাস যে হিসাব দেখিয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। কম্পানিটি দুর্নীতির জন্য গ্রাহকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে এবং তা রেগুলেটরি আর দুর্নীতি দমন কমিশনও জানে। বর্তমানে গ্যাসের জন্য গ্রাহকরা যে পরিমাণে বিল পরিশোধ করে, তা তাদের প্রকৃত ব্যবহারের চেয়েও বেশি।

তিতাস গ্যাস সূত্রে জানা গেছে, ২৮ লাখ ৫৭ হাজার আবাসিক গ্রাহকের মধ্যে প্রায় ২৫ লাখ ২৫ হাজার গ্রাহকই মিটারবিহীন। প্রি-পেইড মিটারে গ্যাসের অপচয় রোধ, গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকা সত্ত্বেও গ্রাহকদের প্রি-পেইড মিটার দিচ্ছে না তিতাস। আরো ১২ লাখ মিটার বসানোর দুটি প্রকল্পের উদ্যোগ নিলেও প্রকল্পটি বেশ কয়েক বছর ধরে আটকে আছে।এখন আবাসিকে গ্যাসের দাম বাড়াতে ভিন্ন কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি এখন দাবি করছে, গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের তুলনায় মিটারবিহীন গ্রাহকরা বেশি গ্যাস ব্যবহার করছে। তাই মিটারবিহীন এক চুলা ও দুই চুলা ব্যবহারকারীদের মাসিক বিল উল্লিখিত হারে বাড়ানোর প্রস্তাব বিইআরসির কাছে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে মিটারবিহীন গ্রাহকরা দুই চুলার জন্য মাসে এক হাজার ৮০ টাকা বিল দিলেও প্রি-পেইড গ্রাহকদের মাসে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে না বলে একাধিক গ্রাহক জানিয়েছে।জ্বালানি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের খরচ তুলনামূলক কম হওয়ার কারণে বিপুলসংখ্যক মিটারবিহীন গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের জন্য তিতাসে আবেদন দিয়ে রেখেছে। এর পরও প্রতিষ্ঠানটি তাদের প্রি-পেইড মিটার দিচ্ছে না। এখন মিটারবিহীন গ্রাহকরা গ্যাস বেশি ব্যবহার করছে, এমন অভিযোগ তুলে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে নিজেদের রাজস্ব বাড়াতে চাইছে তিতাস।

তিতাস সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে তিতাস গ্যাস প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ২৮ লাখ ৫৭ হাজার আবাসিক গ্রাহক আছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ ৩২ হাজার প্রি-পেইড মিটার পেয়েছে। এখনো প্রায় ২৫ লাখ ২৫ হাজার গ্রাহক মিটারবিহীন। জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা), সরকার ও টিজিটিডিসিএলের অর্থায়নে এই প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়। আরো ১২ লাখ মিটার বসানোর দুটি প্রকল্প বেশ কয়েক বছর ধরে আটকে আছে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুরুতে মিটার স্থাপনে সরকারের গ্যাস বিতরণ কম্পানিগুলোর বেশ আগ্রহ ছিল। পরে মিটার স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতা শুরু হয়। এখন আবেদন করেও মিটার পায় না গ্রাহকরা। যদিও প্রি-পেইড মিটারে গ্যাসের অপচয় রোধ, গ্রাহকের খরচ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা প্রায় প্রতিষ্ঠিত।

এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মিটার বসানোর পর কম্পানিগুলো বুঝতে পারে, প্রথাগত বিলিং ব্যবস্থার চেয়ে প্রি-পেইড মিটারে তাদের আয় কমে যাবে। এটি প্রি-পেইড মিটার প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন না হওয়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

সর্বশেষ ২০২২ সালের জুনের নির্ধারিত মূল্যহার অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট ১৮ টাকা হারে দাম ঠিক করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এক চুলার জন্য ৫৫ ঘনমিটার এবং দুই চুলার জন্য ৬০ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহৃত হয়—এমনটি ধরে মাসিক বিল হিসাব করা হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবাসিক, সার ও চা উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ছাড়া অন্য সব খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৪ থেকে ১৭৯ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছিল সরকার।