জীবনে চলার পথে সামনের প্রতিটা দিন সবার জন্য নতুন।জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপে সকল মানুষের আদেশ উপদেশের প্রয়োজন হয়।আর এই উপদেশ কাদের কাছ থেকে নেয়া উচিত? যারা অভিজ্ঞ,যারা পূর্বে ভুল করেছে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহন করেছে তাদের কাছ থেকে।কিন্তু আমরা বর্তমানে কারো কাছ থেকে উপদেশ নেয়াটা পছন্দ করিনা। কারো কাছ থেকে উপদেশ নেয়া থেকে নিজে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পছন্দ করি, নিজে ভুল করে সেই ভুল থেকে শিখতে পছন্দ করি। কেন আমরা বর্তমান প্রজন্ম এমন মনোভসব নিজেদের মধ্যে পুষছি? কেন আমরা কারো উপদেশ দেয়াকে “জ্ঞান দিচ্ছে” বলে আখ্যায়িত করি। আমরা যারা অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ তারা বলে থাকি আজকালকার বাচ্চারা বুঝতেই চায় না। কেন বুঝতে চায়না? বুঝানোর মত করে বোঝালে কেন বুঝবে না? এই “জ্ঞান দেয়া” বা বুঝতে না চাওয়ার কিছুটা দোষারপ আমি উপদেশ দাতাকে দিতে চাই।
অনেক সময় উপদেশ দাতা যখন তার বয়সের ছোটো কাউকে উপদেশ দেয় তখন অনেক সময় ভুলে যান যে সামনে বয়সে ছোটো মানুষটারও একটা সম্মানবোধ আছে। উপদেশ দাতা বয়সে বড় বলে তাকে খুব অসম্মানের সাথে কথা বলে ফেলেন যেমন: “তুমি কি বুঝবা? দুনিয়া দেখলা কয়দিন”, “নিজেকে অনেক চালাক মনে কর তোমরা”, “তোমার কাজে-কর্মেতো এখনো কিছু করে দেখাতে পারলে না, দেখি কি কর”।এ ধরনের কথা-বার্তা বলে যখন সামনের মানুষকে নিচু করা হয়, অসম্মান করা হয় তখন তাদের মানসিক ভাবে বিপর্যয় হয়। তখন তারা ঔ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মানুষ গুলার কাছ থেকে উপদেশ নেয়াটাকে ঠিক চোখে দেখেনা। যেখানে গেলে আত্মসম্মান এর ক্ষয় হয় সেখানে আর যাওয়ার চেয়ে না যাওটাই ভালো মনে করে। মনে রাখা উচিত সম্মান যেকোনো সম্পর্কের জন্য দরকার। কেউ যদি তার পাশের মানুষটিকে সম্মান না করে, তবে খুব কম সময়ের মধ্যেই সম্পর্কে ফাটল ধরতে বাধ্য। এ সম্মান শুধু বড়দের প্রতি ছোটোদের নয়। ছোটোদের প্রতিও বড়দের সম্মান থাকবে হবে। সম্মান যে শুধু বয়সের মুখাপেক্ষী নয়, এ কথা জানতে হবে উভয় পক্ষকেই।
আবার অনেকে উপদশ দেয় ধমক এর মাধ্যমে।উপদেশ হতে হবে নরম স্বরে। ধমক দিয়ে উপদেশ দেয়াকে ধমক বলা হয় না যেটা বেশিরভাগ মানুষই করে থাকেন। এটা সামনের মানুষের ভুল শুধরানোর চেয়ে ভুল বাড়িয়ে দেই। সামনের মানুষের মধ্যে একটা রাগ, ক্ষোভ তৈরি করে যার জন্য সে আরো খারাপ দিকে এগিয়ে যায়। নিজেকে ওর বয়সে থাকা অবস্থায় কল্পনা করা উচিত বা ঔ জায়গায় নিজেকে রেখে যাচাই করা উচিত যে আমাকে কেউ এভাবে বললে আমি কি করতাম?
এর জন্যই সৃষ্টি হয় জেনারেশন গ্যাপ।
ঘটনা
সানার বাবার সাথে চাচাদের সাথে সানা কথা বলতে বা তাদের দেখলে সালাম দিতে চায়না। জীবনের কোনো সিদ্ধান্ত সে তার বাবার সাথে আলাপ করতে চাইনা। এর কারণ তার বাবা তাকে সবসময়ই খোঁচা দিয়ে কথা বলে।কথায় কথায় বলে কিছু করে দেখাতে পারেনি সে।নিজেকে অতিরিক্ত চালাক ভাবে সে। তার সব কাজেই তার বাবা-চাচারা বুঝাতে চায় যে তাকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা। এসব কথাবার্তার জন্য সানা ঘর ছেড়ে চলে যায়। বাবার সাথে তার একটা গ্যাপ তৈরি হয়।
একজন ভালো উপদেশ দাতার উপদেশ কেমন হওয়া উচিত?
সর্বপ্রথম অন্যকে ভালো কাজের উপদেশ দেয়ার আগে তা নিজেকে করতে হবে। উপদেশ হতে হবে নরম কন্ঠে এবং ঠান্ডা মাথায়। কাউকে ছোটো করে নয় সবাইকে সম্মান দিয়ে উপদেশ দিতে হবে।খোটা দেয়ামুলক কথাবার্তা বন্ধ করতে হবে। অন্যের দোষ ছোটো করে এবং নিজের দোষকে বড় করে দেখতে হবে।পাশে আছি থাকবো এই ধরনের সাপোর্টিভ কথাবার্তা বলতে হবে। পূর্বের ভুল আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে খোঁচা দিয়ে কথা নয়,ভুল শুধরে দেয়াই অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিজ্ঞ লোকের কাজ।
উপদেশ গ্রহিতাকেও বড়দের উপদেশ টা পজিটিজ ভাবে নিতে হবে।মতের অমিল হবেই। শুধু মতের অমিল নিয়ে বসে থাকলে চলবে না মিলটাও খুঁজে বের করতে হবে।সবসময়ই মাথায় রাখতে হবে বড়রা যা বলছে তা ভালোর জন্যই বলছে।