কাপ্তাই লেকের পানি ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে নেমে এসেছে। পানির অভাবে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ৫টি ইউনিট পুরোপুরি উপযোগী থাকলেও বর্তমানে চলছে মাত্র একটি ইউনিট। পানির অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। একই সাথে রাঙ্গামাটি জেলার ৬টি উপজেলার সাথে নৌ চলাচলও বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে।
কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী এ টি এম আব্দুজ্জাহের কাপ্তাই লেকে পামি কম থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, রুলকার্ভ (পানির পরিমাপ) অনুযায়ী এখন (গতকাল) কাপ্তাই লেকে পানি থাকার কথা ৭৮.৪৫ ফুট মিন সি লেভেল। কিন্তু এই মুহুর্তে লেকে পানি রয়েছে ৬৯.০২ ফুট মিন সী লেভেল। লেকের পানি বিপজ্জনক পর্যায়ে কমে গেছে উল্লেখ করে ব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের সবগুলো ইউনিট এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু কাপ্তাই লেকে পানি কম থাকায় একটি ইউনিট চালু রেখে কোনমতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আর চালু এই ১টি ইউনিট থেকে ৪২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও উৎপাদন করা হচ্ছে মাত্র ২৫ মেগাওয়াট। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে। এদিকে পানির অভাবে কাপ্তাই লেকের বিশাল অংশ বর্তমানে শুকিয়ে আছে। কাপ্তাই রাঙ্গামাটি আসামবস্তি সড়কের সেতুর নিচে বর্তমানে মোটেও পানি নেই। লেকের অন্যান্য অংশও শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। নদী পথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মিজানুর রহমান বলেন, কাপ্তাই লেকের অনেক স্থানে এখন স্পিড বোট চালানো যাচ্ছে না। যার ফলে প্রয়োজনীয় দাপ্তরিক কাজও থমকে আছে।
বরকল থানার ওসি মো. নাসির উদ্দীন বলেন, সমগ্র বরকল উপজেলা পানি পরিবেষ্টিত হওয়ায় স্পিড বোট বা ইঞ্জিন নৌকা ছাড়া চলাচল সম্ভব নয়। কিন্তু কাপ্তাই লেকের অনেক স্থানে পানি না থাকায় স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
কাপ্তাই বোট মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস মিয়া বলেন, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বাঘাইছড়ি, বরকল, নানিয়ারচর, লংগদু উপজেলাসহ রাঙ্গামাটির আরো অনেক এলাকায় যোগাযোগের জন্য একমাত্র মাধ্যম হলো নৌ পথ। কিন্তু কাপ্তাই লেকে পানি না থাকায় আমরা বোট চালাতে পারছি না। আর অনেক দূর ঘুরে গন্তব্যে যাতায়াতের চেষ্টা করা হলেও সময় বেশি লাগছে এবং অতিরিক্ত টাকাও খরচ হচ্ছে। এছাড়াও অল্প পানিতে বোট চালাতে গিয়ে প্রায় সময় ইঞ্জিন নৌকার ফ্যান ভেঙে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এ টি এম আব্দুজ্জাহের বলেন, কাপ্তাই লেকের পানি বৃদ্ধি মূলত প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ বৃষ্টি হলেই কাপ্তাই লেকে পানি বৃদ্ধি পাবে। গত নভেম্বর মাস থেকে অত্রাঞ্চলে বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। যে কারণে কাপ্তাই লেকের পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে কাপ্তাই লেকের পানি বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।