বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সোমবার (৯ জুন) চারদিনের সরকারি সফরে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। তার এই সফর ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের পাশাপাশি নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের এক চিঠি।
যুক্তরাজ্যের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানায়, হ্যাম্পস্টেড ও হাইগেট আসনের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিক—যিনি বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি—ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন,“আপনার লন্ডন সফরের সময় যদি আমাদের সাক্ষাৎ হয়, তবে আমার খালা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু ভুল বোঝাবুঝি পরিষ্কার করার সুযোগ হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এনেছে, তা তিনি ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মনে করেন। একই সঙ্গে অভিযোগ করেন, তার আইনজীবীরা লন্ডন থেকে দুদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাননি। বরং সংস্থাটি ঢাকার একটি ‘অচেনা ঠিকানায়’ কাগজপত্র পাঠিয়ে চলেছে।
দুদক দাবি করেছে, টিউলিপ এবং তার মা অবৈধভাবে ৭ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি সরকারি প্লট দখল করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ নিয়ে এই সুবিধা আদায় করা হয়েছে।
এ ছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ট্রাইব্যুনালে তার অনুপস্থিতিতে বিচার চলছে।
টিউলিপ সিদ্দিক এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমি লন্ডনে জন্মেছি, এখানেই আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবন। বাংলাদেশের প্রতি আবেগ থাকলেও, সেখানে আমার কোনও ব্যবসা বা বসবাস নেই।”
তিনি বলেন, তার আইনি দল অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ বলে মনে করে। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত তার সঙ্গে বা তার আইনজীবীদের সঙ্গে সরকারি কোনও যোগাযোগ হয়নি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চিঠি একদিকে যেমন ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে অন্যতম ক্ষমতাশালী রাজনৈতিক পরিবারের একটি সরাসরি যোগাযোগের ইঙ্গিত, তেমনি এটি দুর্নীতির অভিযোগকে আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি রাজনৈতিক বিতর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার কৌশলও হতে পারে।
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই চিঠি রাজনৈতিক সুরক্ষা ও দায়মুক্তির এক প্রকার কূটনৈতিক প্রয়াস বলেও মনে করছেন অনেকে।
ড. ইউনূস এই চিঠির জবাব দেবেন কি না, বা সাক্ষাৎ হবে কি না, তা এখনো জানা যায়নি। তবে এই ঘটনাটি লন্ডন সফরের কূটনৈতিক গুরুত্বকে বহুগুণে বাড়িয়ে তুলেছে।