আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহে প্রস্তুতি নিচ্ছেন চট্টগ্রামের আড়তদারেরা। ইতোমধ্যে তারা পুঁজি সংগ্রহ, বেপারী ঠিক করা, লবণ মজুদ এবং শ্রমিক নিয়োগের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এবারের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৪ লাখ।
চট্টগ্রাম নগরের আতুরার ডিপো এলাকায় মূলত চামড়ার আড়ত গড়ে উঠেছে। এছাড়া আগ্রাবাদ চৌমুহনী ও আশপাশের এলাকাতেও কিছু আড়ত রয়েছে। নগরের বিভিন্ন মাদরাসা ও এতিমখানাও নিজেদের উদ্যোগে চামড়া সংরক্ষণ করে থাকে।
চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ জানান—“ঢাকার ট্যানারিগুলো এবার কিছুটা বকেয়া পরিশোধ করেছে, তাই আশাবাদী হয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছি। গুদাম ঠিক করা, লবণ মজুদ ও শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। কোরবানির দিন থেকে পরবর্তী ৩–৪ দিন চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও চামড়া আসবে।”
তিনি আরও জানান, গত বছর ৩ লাখ ৬০ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল, এবার লক্ষ্য ৪ লাখ।
তবে আড়তদারদের অভিযোগ, লবণযুক্ত চামড়ার সঙ্গে কাঁচা চামড়ার দামে পার্থক্য থাকায় মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং পরে এর দায় চাপান আড়তদারদের ওপর। একটি ২০ ফুটের চামড়ার পেছনে প্রায় ৫০০ টাকা খরচ হয়— যার মধ্যে রয়েছে লবণ, শ্রমিক মজুরি, পরিবহন ইত্যাদি।
চলতি বছর লবণের দাম প্রতি বস্তায় ১০০ টাকা কম হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি মিলেছে আড়তদারদের মাঝে। তবে চট্টগ্রামে মাত্র একটি ট্যানারি থাকায়, বড় পরিসরে চামড়া প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এবারও অধিকাংশ চামড়া ঢাকার ট্যানারিগুলোতে পাঠানো হবে।
সরকার এবার গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে প্রতি বর্গফুট ৬০–৬৫ টাকা (ঢাকায়) এবং ৫৫–৬০ টাকা (ঢাকার বাইরে) নির্ধারণ করেছে। খাসি ও বকরির চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে ২ টাকা।
তবে আড়তদাররা বলছেন, “চামড়া কেনার সময় ২০% বাদ দিয়ে হিসাব করতে হয়। ফলে বাস্তবে প্রতি বর্গফুটে ৫৫–৬০ টাকা পড়ে না। চামড়ার মানেও বেশ পার্থক্য থাকে।”
চট্টগ্রামের মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের দাবি, যথাযথ মূল্য, সময়মতো বকেয়া পরিশোধ এবং স্থানীয় ট্যানারি ব্যবস্থার সম্প্রসারণ না হলে চামড়াশিল্প ধীরে ধীরে আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তবে এবারের প্রস্তুতি ও সরকারের দাম নির্ধারণে কেউ কেউ আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।