ঢাকাবৃহস্পতিবার, ৫ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

চট্টগ্রামে কেএনএফ’র ইউনিফর্ম সরবরাহে জড়িত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছালাম

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
জুন ৩, ২০২৫ ১২:৪৬ অপরাহ্ণ
Link Copied!

পার্বত্য চট্টগ্রামের নিষিদ্ধ ঘোষিত সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম সরবরাহের অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগরের একটি তৈরি পোশাক কারখানায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটি সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা মো. আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন শিল্পগোষ্ঠী ওয়েল গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। অভিযানে চারজনকে আটক করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন ছালামের ছোট ভাই তারেকুল ইসলাম।

সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় নগরীর চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় অবস্থিত ওয়েল ফেব্রিক্স লিমিটেড নামের কারখানাটিতে এই অভিযান চালায় পুলিশ। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিক আহমেদ জানান, কুকি-চিনের পোশাক উদ্ধার সংক্রান্ত একটি চলমান মামলার সূত্র ধরে এই অভিযান পরিচালিত হয়। আটককৃত চারজনকে বায়েজিদ বোস্তামি থানায় হস্তান্তর করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ওয়েল ফেব্রিক্স লিমিটেডের মালিকানা সাবেক সংসদ সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. আবদুচ ছালাম’র পরিবারের হাতে। তিনি ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন।

এ ঘটনার আগে গত ১৭ মে বায়েজিদ থানার নয়াহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস নামক একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে ২০ হাজার ৩০০টি কেএনএফ ইউনিফর্ম জব্দ করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় কারখানার মালিক সাহেদুল ইসলাম এবং ইউনিফর্ম তৈরির অর্ডারদাতা গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দারকে।

পুলিশ জানায়, তারা মংহলাসিন মারমা ওরফে মং নামে কেএনএফ সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির কাছ থেকে দুই কোটি টাকার চুক্তিতে এই ইউনিফর্ম তৈরির কাজ পেয়েছিলেন। চলতি মে মাসে তা সরবরাহের কথা ছিল।

এরপর ২৬ মে এবং ২৮ মে তারিখে নগরীর বায়েজিদ ও পাহাড়তলী এলাকায় আরও দুটি গুদাম ও কারখানায় অভিযান চালিয়ে যথাক্রমে ১১ হাজার ৭৮৫ এবং প্রায় ১৫ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করে পুলিশ। এসব অভিযানে আরও কয়েকজন গ্রেপ্তার হন।

বায়েজিদ বোস্তামি থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়, কেএনএফ একটি সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন, যা পার্বত্য রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান অঞ্চলে সক্রিয়। তারা সশস্ত্র অবস্থানে থেকে চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ, গুমসহ রাষ্ট্রবিরোধী নানা কার্যক্রমে লিপ্ত। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা রাষ্ট্রের অখণ্ডতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত।

সবশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের মধ্যে রয়েছেন সাবেক এমপি আবদুচ ছালামের ভাই তারেকুল ইসলাম। তিনি কারখানার তত্ত্বাবধানে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি সরাসরি কেএনএফ সংশ্লিষ্ট অর্ডার কার্যকর করার কাজে যুক্ত ছিলেন।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, কেএনএফ এর মতো সশস্ত্র সংগঠনের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর গোপন লেনদেন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। এ বিষয়ে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উপর নজর রাখা হচ্ছে এবং তদন্ত চলছে।