ঢাকাশনিবার, ৩১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হালদায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ, দক্ষিণ এশিয়ার প্রাকৃতিক ঐতিহ্যে প্রাণের ছোঁয়া

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ৩০, ২০২৫ ১:৫৮ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের হালদা নদী, দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এবারও নদীটির বুকে শুরু হয়েছে প্রাণের উৎসব—ডিম ছেড়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল ও কালবাউশ প্রজাতির মা মাছ। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে হালদার তিন-চারটি স্থানে এ প্রজনন কার্যক্রম শুরু হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান এবং হালদা গবেষক অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “প্রাকৃতিক নিয়ম অনুযায়ী অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় বজ্রসহ বৃষ্টির সময় হালদায় ঢল নামে, আর তখনই ডিম ছাড়ে মা মাছ। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় স্বল্প পরিসরে হলেও ডিম ছাড়ার ঘটনা ঘটেছে।”

রাতের ঘন অন্ধকারে নদীর দুই তীরে সৃষ্টি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। শত শত নৌকায় বসে ডিম সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করেছেন স্থানীয় সংগ্রাহকরা। প্রবীণ মাছ ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন সওদাগর জানান, “রাত ৪টা থেকেই আমরা নৌকায় বসে ডিম সংগ্রহ শুরু করেছি। মা মাছ এবারও ভালো পরিমাণ ডিম ছেড়েছে। এ সময়টায় হালদা যেন উৎসবের নগরী হয়ে ওঠে।”

প্রাকৃতিক এই ডিম সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুধু অর্থনৈতিকভাবেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি চট্টগ্রামের নদীভিত্তিক সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর হালদার এই ডিম থেকে রেণু পোনা উৎপন্ন হয় যা দেশীয় মাছের বৈচিত্র্য ও উৎপাদন বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

প্রজনন মৌসুম ঘিরে হাটহাজারী ও রাউজান উপজেলার চারটি সরকারি হ্যাচারি এবং শতাধিক মাটির কুয়া ইতোমধ্যেই প্রস্তুত রেখেছে স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্যোক্তারা। হালদা নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও এবার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। নদীতে বাড়ানো হয়েছে নজরদারি, চলছে জলদূষণ ও অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান।

গবেষকদের মতে, বিশ্বের খুব কম জায়গায় এমন প্রাকৃতিকভাবে দেশীয় মাছের প্রজননের সুযোগ তৈরি হয়। হালদা তাই শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশগত সম্পদ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নদী ও এর বাস্তুতন্ত্র সুরক্ষায় সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি স্থানীয়দের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা আরও জোরদার করা জরুরি।