বৃষ্টি ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে কক্সবাজারের মহেশখালীর উপকূলীয় নিম্নাঞ্চলগুলো ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে দানু মিয়া (৪২) নামের এক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছেন। তিনি মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙা এলাকার বাসিন্দা।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মৃগী রোগে আক্রান্ত দানু মিয়া দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভারসাম্য হারিয়ে পানিতে পড়ে যান এবং অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৯১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। এর সঙ্গে ঘনীভূত নিম্নচাপের প্রভাবে সমুদ্রের জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় কুতুবজোম, সাইরার ডেইল, ধলঘাটা ও ছোট মহেশখালীর বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও শত শত বসতবাড়ি পানির নিচে চলে গেছে। তীব্র লোডশেডিং ও পানি ঢুকে পড়ায় মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ভেঙে পড়েছে। অনেকে ঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন।
জেলে সোনা মিয়া বলেন, “আমার শেষ সম্বল ছিল ঘরটা। সেটাও এখন সাগরে চলে যাচ্ছে।” আরেক বাসিন্দা রহিমা বেগম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রতিবছর আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হয়।”
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বদরখালী নৌ-চ্যানেলে অবস্থানরত অনেক ফিশিং ট্রলারের জাল ছিঁড়ে গেছে। জীবন ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা বাধ্য হয়ে তীরে ফিরে এসেছেন। তাদের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে মহেশখালী-কক্সবাজার নৌরুটে সকাল ১১টা থেকে সী-ট্রাক চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেদায়েত উল্যাহ বলেন, “উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একজন মৃত্যুবরণ করেছেন। দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষ সরিয়ে আনা হচ্ছে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এতে করে কক্সবাজার উপকূলে ২–৩ ফুট উচ্চতায় জোয়ারের সম্ভাবনা রয়েছে। সব নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উপকূলবাসীরা দ্রুত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, প্রতিবছর এমন দুর্যোগে পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।