ঢাকামঙ্গলবার, ৩রা জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সাউদার্নে সনদ বাণিজ্যসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ, হুমকির মুখে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ!

নিউজ ডেস্ক | সিটিজি পোস্ট
মে ২৬, ২০২৫ ১:০০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

চট্টগ্রামের বেসরকারি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবশেষে প্রতিষ্ঠানটিতে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে। সাবেক ইএমই পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ফারুককে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনে সাময়িকভাবে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা যেকোনো সময় বাতিলযোগ্য। তিনি নির্ধারিত বেতন-ভাতা ও সুবিধা ভোগ করবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন করবে।

সাউদার্নে সনদ বাণিজ্য, ভুয়া উপাচার্য নিয়োগসহ একাধিক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ২০২৪ সালের এপ্রিলে অধ্যাপক মোজাম্মেল হককে নিয়মবহির্ভূতভাবে অব্যাহতি দিয়ে শরীফ আশরাফুজ্জামানকে ভিসির দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাঁর বিরুদ্ধে ভুয়া এমবিএ সনদের অভিযোগও রয়েছে।

মজার ব্যাপার হলো, বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় ২০০৩ সালে, অথচ আশরাফুজ্জামান দাবি করেন তিনি এখান থেকে ১৯৯৮ সালে এমবিএ করেছেন!

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিওটি’র সদস্য সচিব সরওয়ার জাহান, সদস্য ইসরাত জাহানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভিসি অধ্যাপক মোজাম্মেল হক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় অভিযোগ আমলে নিয়ে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে (ইউজিসি) তদন্তের নির্দেশ দেয়। সেই অনুযায়ী ইউজিসি চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্তে অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়ায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান অস্থিরতা নিরসনে প্রশাসক নিয়োগের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে বিভিন্ন অনিয়মসহ অর্থের বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রির সঙ্গে জড়িত তিনি। বোর্ড অব ট্রাস্টির কয়েকজন বাদে বেশিভাগই চাপে পড়ে সরওয়ার জাহানের অবৈধ কর্মকাণ্ড সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। যারা সমর্থন দিচ্ছেন, তারা আওয়ামী লীগ সরকারের মদদপুষ্ট ছিলেন।

সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির আওয়ামীঘনিষ্ঠ ট্রাস্ট্রি বোর্ডের সদস্য হিসেবে রয়েছেন মীর আবদুস সালাম। যিনি চট্টগ্রামের অর্থপাচার ও লুটপাটে অভিযুক্ত এস আলমের বেয়াই। এছাড়াও আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সাবেক সাংসদ আবদুচ ছালাম, ঋণখেলাপি মামলার অন্যতম আসামি মোস্তফা গ্রুপের পরিচালক শফিক উদ্দিন এবং জাহান আলমগীর।

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির বিষয়ে সতর্ক করেছে খোদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। গত ২৮ নভেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে সাউদার্নসহ ৮ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্কবার্তা জানায় ইউজিসি। ভর্তি হয়ে প্রতারিত হলে এবং পরে কোনো আইনগত সমস্যা সৃষ্টি হলে তার দায় ইউজিসি নেবে না বলেও জানানো হয়।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত ভিসি যদি আদালতের রায়ে অবৈধ প্রমাণিত হন। তবে তার স্বাক্ষর করা সকল সনদই অবৈধ হিসবে গণ্য হবে। সেক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত ভিসি থাকাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইস্যু করা প্রত্যেকটি সার্টিফিকেটই বাতিল হতে পারে। আর এতে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত হুমকির মুখে পড়বে।